মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে সংঘটিত একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা, যা সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। মা এবং তার প্রেমিকের হাতে আট বছর বয়সী এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়, যা আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
এই ঘটনায় জড়িত মা, পার্ল ফার্নান্দেজকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, এবং বর্তমানে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার একটি কারাগারে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন।
২০১৩ সালের মে মাসে, পালমডেল, ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা পার্ল ফার্নান্দেজ তার ছেলে গ্যাব্রিয়েল ফার্নান্দেজের শ্বাসকষ্টের কথা জানিয়ে জরুরি বিভাগে ফোন করেন। এরপর অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছালে তারা শিশুটির শরীরে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়।
গুরুতর আহত অবস্থায় গ্যাব্রিয়েলকে হাসপাতালে নেওয়া হলে, চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তদন্তে জানা যায়, গ্যাব্রিয়েলের মা পার্ল এবং তার প্রেমিক ইসাউরো অ্যাগুইরের হাতেই ঘটেছিল এই নৃশংসতা। ছোট্ট গ্যাব্রিয়েলকে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো।
তার শরীরে ছিল ভাঙা হাড়, পোড়া ক্ষত এবং গুলির আঘাতের চিহ্ন। এমনকি, তাকে বিড়ালদের আবর্জনা ও মল খেতে বাধ্য করা হতো।
নির্যাতনের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে মৃত্যুর আগে তাকে একটি ছোট আলমারির ভেতর হাত-পা বেঁধে রাখা হতো।
ঘটনার তদন্তে, মা পার্ল ফার্নান্দেজ এবং তার প্রেমিক ইসাউরো অ্যাগুইরেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিচারের সময়, গ্যাব্রিয়েলের পরিবারের সদস্যরা, বিশেষ করে তার ভাইবোনরা, তাদের উপর হওয়া নির্যাতনের বর্ণনা দেন।
আদালতের শুনানিতে জানা যায়, গ্যাব্রিয়েলকে হত্যার মূল হোতা ছিল ইসাউরো অ্যাগুইরে। ২০১৭ সালে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
যদিও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর মৃত্যুদণ্ডের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছেন, তাই তার সাজা এখনো কার্যকর হয়নি। অন্যদিকে, ২০১৮ সালে পার্ল ফার্নান্দেজ দোষ স্বীকার করেন এবং তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যেখানে প্যারোলের কোনো সুযোগ নেই।
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজন সমাজকর্মীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছিল, যারা গ্যাব্রিয়েলের প্রতি হওয়া নির্যাতন সম্পর্কে অবগত ছিলেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেননি।
যদিও পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো খারিজ হয়ে যায়।
বর্তমানে, পার্ল ফার্নান্দেজ ক্যালিফোর্নিয়ার একটি মহিলা কারাগারে বন্দী জীবন অতিবাহিত করছেন। অন্যদিকে, ইসাউরো অ্যাগুইরে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি কারাগারে মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন।
এই ঘটনা শিশুদের প্রতি সহিংসতা এবং দুর্বল শিশুদের নিরাপত্তা প্রদানে সমাজের ব্যর্থতাকে তুলে ধরে।
তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।