স্প্যানিশ চলচ্চিত্র পরিচালক পেড্রো আলমোদোভার নব্বইয়ের দশকে তার কাজের ধারা এবং ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বেশ সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন। তার নির্মিত ছবি ‘কিকা’ মুক্তি পাওয়ার পর অনেক দর্শক এবং সমালোচক এর বিষয়বস্তু নিয়ে আপত্তি জানান।
এই সময়ে তার খ্যাতি এবং স্পেনের সামাজিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন, দুটোই যেন তার জীবনে এক গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
আলমোদোভার মূলত পরিচিত ছিলেন “হোয়াট হ্যাভ আই ডান টু ডিজার্ভ দিস?” এবং “ওমেন অন দ্য ভার্জ অফ আ নার্ভাস ব্রেকডাউন”-এর মতো ছবিগুলোর জন্য, যা তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়।
কিন্তু ‘কিকা’ ছবিতে একজন পর্ন তারকা, লেসবিয়ান কাজের মেয়ে, সিরিয়াল কিলার এবং একটি ধর্ষণ দৃশ্য ছিলো, যা অনেকের কাছেই “অশ্লীল” ও “অগ্রহণযোগ্য” মনে হয়েছিল। সমালোচকদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছিলেন, ইউরোপের এই ‘নৃত্যগুরু’ (clown prince of Europe) কি তাহলে তার পুরনো হাস্যরসের অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছেন?
১৯৯৪ সালের দিকে মাদ্রিদে এক সাক্ষাৎকারে আলমোদোভারকে বিষণ্ণ এবং হতাশ দেখাচ্ছিল। তিনি জানান, স্পেনের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।
আশির দশকের শুরুর দিকে স্পেন ছিলো সবচেয়ে মুক্ত একটি দেশ, যেখানে সমাজের সব স্তরের মানুষের অবাধ বিচরণ ছিলো। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে এসে যেন সবকিছু পালটে গেছে।
আলোচিত এই সময়ে আলমোদোভারের পুরনো বন্ধু এবং সহকর্মীরাও তার খ্যাতি নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করতে শুরু করেন। তাদের মতে, খ্যাতি যেন এই পরিচালকের শিল্পীসত্তাকে গ্রাস করেছে।
চিত্রশিল্পী গিয়ের্মো পেরেজ ভিলালতা ১৯৮০-এর দশকে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর জন্য দায়ী করেন, যা পরবর্তীতে অনেক সমস্যার সৃষ্টি করেছে।
তবে সমালোচনার মুখেও, আলমোদোভার তার কাজের পক্ষে ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি যা করেছেন, তা নিয়ে তিনি গর্বিত এবং যদি আবার জীবন ফিরে পান, তবে একই কাজগুলো আবার করবেন।
আলমোদোভারের এই সংকট, খ্যাতি এবং শিল্পীসত্তার দ্বন্দ নিয়ে আসা এই বিতর্ক, সেই সময়ের স্প্যানিশ সমাজে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। একজন খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতার জীবন এবং তার কাজের এই পরিবর্তন, আজও শিল্প এবং সমাজের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান