গ্রিসের পেলোপনেস উপদ্বীপ: ইতিহাসের স্বাদ আর প্রকৃতির শোভা।
ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত গ্রিসের পেলোপনেস উপদ্বীপ, যা ইতিহাস আর প্রকৃতির এক অপূর্ব মিলনস্থল। যারা কোলাহলমুক্ত, শান্ত একটি পরিবেশে ছুটি কাটাতে চান, তাদের জন্য এই স্থানটি আদর্শ।
এখানে একদিকে যেমন রয়েছে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন, তেমনই অন্যদিকে রয়েছে সবুজে ঘেরা পাহাড়, নীল সমুদ্র আর মনোমুগ্ধকর গ্রাম। আসুন, আজ আমরা এই পেলোপনেসের সাতটি বিশেষ দিক সম্পর্কে জানি যা আপনার মন জয় করে নিতে পারে।
১. পাহাড়ি গ্রামে প্রকৃতির সান্নিধ্যে:
পেলোপনেসের হেলমোস পর্বতের কাছে কেরপিনির একটি মনোরম “এগ্রিটুরিজমো” (farm stay) -তে প্রকৃতির কাছাকাছি কিছু সময় কাটানো যেতে পারে। এখানে আপনি শহরের জীবনের কোলাহল থেকে দূরে, প্রকৃতির কোলে কয়েকটা দিন কাটাতে পারবেন।
এখানকার পাহাড়ের সুন্দর দৃশ্য, ফল ও সবজির বাগান, আর স্থানীয় মানুষের আতিথেয়তা—সবকিছুই আপনাকে মুগ্ধ করবে। এখানকার ফার্মের জীবজন্তুদের সাথে সময় কাটানো, ফল ও সবজি তোলা, এমনকি ঐতিহ্যপূর্ণ পদ্ধতিতে আঙ্গুর সংগ্রহের মতো অভিজ্ঞতাও আপনার ভ্রমণকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।
২. নিমেয়ার ওয়াইনারি:
পেলোপনেসের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত নিমেয়া অঞ্চলটি গ্রিসের অন্যতম প্রধান ওয়াইন উৎপাদন কেন্দ্র। এখানকার সবুজ পাহাড়ের ঢালে সাইপ্রাস গাছের সারি, আর তার মাঝে ওয়াইনারিগুলোর দৃশ্য যেন এক টুকরো ছবি।
এখানে আপনি বিভিন্ন ওয়াইনারিগুলোতে যেতে পারেন, যেখানে আপনাকে ওয়াইন ট্যুর ও টেস্টিং-এর সুযোগ দেওয়া হবে। এপ্রিল-মে মাসে আঙুর ক্ষেতের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া, অথবা আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ফসল তোলার দৃশ্য দেখা—এগুলো হতে পারে আপনার ভ্রমণের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সেমেলি এস্টেটে (Semeli Estate)-এ বসে স্থানীয় খাবার ও ওয়াইনের স্বাদ নিতে পারেন, যা আপনাকে অন্যরকম অভিজ্ঞতা দেবে।
৩. ডিরোসের গুহা:
পেলোপনেসের ম্যানি উপদ্বীপের কাছে ডিরোসের গুহাগুলোতে নৌকায় করে ভ্রমণ একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এই গুহাগুলোতে রয়েছে হাজার বছর ধরে তৈরি হওয়া নানান আকারের পাথর, যা দেখলে মনে হয় যেন এক রূপকথার জগৎ।
এখানকার স্বচ্ছ নীল জলের উপর নৌকায় চড়ে যাওয়া, আর গুহার ভেতরের দৃশ্য—সবকিছুই আপনাকে মুগ্ধ করবে।
৪. ভইদোকিলিয়া সৈকত:
পেলোপনেসের দক্ষিণ-পশ্চিমের মেসিনিয়া অঞ্চলের ভইদোকিলিয়া সৈকত, যা সাদা বালি আর নীল জলের এক অপূর্ব দৃশ্য। এই অর্ধচন্দ্রাকৃতির সৈকতটি পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
এখানে সাঁতার কাটার পাশাপাশি আপনি গিয়ালোভা লেগুনে যেতে পারেন, যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা যায়। কিংবদন্তি আছে, এই সৈকতটি নাকি হোমারের ‘স্যান্ডি পাইলস’।
৫. জলপাই বাগান ও ঐতিহ্য:
পেলোপনেস জলপাই গাছের জন্য বিখ্যাত। এখানে প্রায় তিন কোটি জলপাই গাছ রয়েছে, যা গ্রিসের মোট জলপাই তেলের এক তৃতীয়াংশ উৎপাদন করে।
মেসিনিয়ার আন্দ্রুসা গ্রামে ‘দি অলিভ রুটস’-এর (The Olive Routes) মাধ্যমে আপনি এখানকার ঐতিহ্যবাহী জলপাই বাগানগুলোতে ঘুরতে পারেন। তাছাড়া, জলপাই তেল তৈরির প্রক্রিয়া ও রান্নার কৌশল সম্পর্কেও জানতে পারবেন।
৬. ভুরাইকোস গিরিখাতে ট্রেন ভ্রমণ:
পেলোপনেসের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো ভুরাইকোস গিরিখাতের মধ্য দিয়ে যাওয়া একটি বিশেষ রেলপথ। ১৮৯৬ সাল থেকে চালু হওয়া এই ট্রেনে করে দিয়াকোপটো থেকে কালাভ্রিতা পর্যন্ত ভ্রমণ করা এক ঘণ্টার এক দারুণ অভিজ্ঞতা।
পাহাড়ের গা ঘেঁষে যাওয়া এই পথ আপনাকে মুগ্ধ করবে।
৭. প্যাট্রিক লি ফারমারের বাড়ি:
ব্রিটিশ লেখক প্যাট্রিক লি ফারমারের (Patrick Leigh Fermor) বাড়িটি এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। তিনি এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সংস্কৃতির প্রেমে পড়ে এখানে বসবাস করতেন।
তার বাড়িটি এখন একটি জাদুঘর, যেখানে তার জীবন ও কাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।
পেলোপনেস, প্রকৃতির অপরূপ শোভা আর ইতিহাসের এক অসাধারণ মিলনস্থল। আপনার পরবর্তী ভ্রমণের জন্য এই স্থানটি বিবেচনা করতে পারেন, যা একইসঙ্গে আনন্দ ও জ্ঞানের অভিজ্ঞতা দেবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক