পুরুষদের একাকিত্ব ঘোচাতে প্রাণীর সাহচর্য: সিনেমার পর্দায় নতুন এক গল্পের উন্মোচন।
সিনেমার জগৎ সবসময়ই জীবনের প্রতিচ্ছবি। আর সেই প্রতিচ্ছবি কখনও কখনও আমাদের খুব কাছের মানুষদের গল্প বলে।
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া পিটার ক্যাটা নিও পরিচালিত ‘দ্য পেঙ্গুইন লেসনস’ তেমনই একটি সিনেমা, যা মানুষের জীবনে একটি বিশেষ প্রাণীর গুরুত্ব তুলে ধরেছে। ১৯৭৬ সালের আর্জেন্টিনার রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই সিনেমায় দেখা যায়, টম মিশেল নামের এক শিক্ষকের জীবনে একটি পেঙ্গুইনের আগমনে কীভাবে পরিবর্তন আসে।
মিশেল চরিত্রে অভিনয় করেছেন স্টিভ কুগান। গল্পের শুরুতে তিনি কিছুটা উদাসীন ও একাকী একজন মানুষ। বন্ধুদের প্রভাবিত করতে গিয়ে তিনি উরুগুয়ের সমুদ্র সৈকত থেকে তেল চিটচিটে একটি ম্যাгелান পেঙ্গুইনকে উদ্ধার করেন।
এরপর সেই পেঙ্গুইন, যার নাম রাখা হয় জুয়ান সালভাদর, মিশেলের জীবনে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে। জুয়ান সালভাদর মিশেলের একাকিত্ব দূর করে এবং শিক্ষক, ছাত্র ও সহকর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক গভীর করতে সহায়তা করে।
সিনেমাটি মূলত একজন মানুষের ভেতরের পরিবর্তন এবং একটি প্রাণীর প্রতি ভালোবাসার গল্প।
‘দ্য পেঙ্গুইন লেসনস’-এর মতো সিনেমায় প্রায়ই দেখা যায়, জীবনের এক বিশেষ সময়ে পুরুষদের একাকিত্ব ঘোচাতে এগিয়ে আসে কোনো প্রাণী। এই ধরনের সিনেমাগুলো দর্শকদের মন জয় করে নেয়, কারণ তারা মানুষের গভীর আবেগগুলো পর্দায় ফুটিয়ে তোলে।
শুধু ‘দ্য পেঙ্গুইন লেসনস’ নয়, কুকুরকে কেন্দ্র করে নির্মিত ‘ডগ’ (২০২২), শূকর নিয়ে তৈরি ‘পিগ’ (২০২১), কিংবা ‘জন উইক’ সিরিজের সিনেমাগুলোও একই ধরনের অনুভূতি দেয়। এছাড়াও, ‘দ্য কল অফ দ্য ওয়াইল্ড’ এবং ‘হাচি: আ ডগ’স টেল’-এর মতো সিনেমাগুলোতেও পশু-পাখির প্রতি মানুষের গভীর ভালোবাসার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ড. ক্রিস ব্লাজিনা পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর মতে, অনেক পুরুষ মানুষের চেয়ে বরং তাদের পোষা প্রাণীর সঙ্গে বেশি নিরাপদ বোধ করেন।
সমাজে পুরুষদের আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ থাকে। ফলে, অনেক পুরুষ হয়তো সহজে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেন না। কিন্তু পোষা প্রাণীর সঙ্গে তারা সেই বাধাগুলো অতিক্রম করতে পারেন।
ব্লাজিনার মতে, সামাজিক সম্পর্ক কমে গেলে মানুষের জীবনে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। পোষা প্রাণী এক্ষেত্রে বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের মতো পাশে থাকে এবং একাকিত্ব দূর করতে সাহায্য করে।
সিনেমার পর্দায় পশু-পাখির এই উপস্থিতি আসলে আমাদের সমাজেরই প্রতিচ্ছবি। কারণ, মানুষ হিসেবে আমরা সবাই সম্পর্কের গুরুত্ব বুঝি।
কখনও কখনও, বিশেষ করে একাকিত্বের সময়ে, একটি পোষা প্রাণী আমাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। তারা আমাদের নিঃসঙ্গতা দূর করে, মানসিক শান্তি এনে দেয় এবং ভালোবাসার একটি নতুন জগৎ তৈরি করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান