আতঙ্কের কারণ পেঙ্গুইনের ‘মল’! কাঁকড়াদের জীবন বাঁচাতে কীভাবে?

অ্যান্টার্কটিকার গভীর সমুদ্রে বসবাসকারী ক্ষুদ্র প্রাণী, ক্রিল। এরা আকারে খুবই ছোট হলেও এই অঞ্চলের খাদ্য শৃঙ্খলে এদের গুরুত্ব অপরিসীম। তিমি থেকে শুরু করে সিল, পেঙ্গুইন সহ আরও অনেক সামুদ্রিক প্রাণী এদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।

সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, পেঙ্গুইনের বর্জ্য ক্রিলদের জীবন বাঁচানোর এক গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হিসেবে কাজ করে।

অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী এ বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁরা অ্যান্টার্কটিকার একটি গবেষণা কেন্দ্রে ক্রিলদের উপর পরীক্ষা চালান।

বিজ্ঞানীরা প্রথমে ক্রিলদের একটি ট্যাঙ্কে রাখেন এবং এরপর সেখানে পেঙ্গুইনের বর্জ্য মিশ্রিত করেন। পরীক্ষার ফলাফল ছিল বেশ চমকপ্রদ।

বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, বর্জ্য মিশ্রণের সঙ্গে সঙ্গেই ক্রিলগুলি দ্রুত সাঁতরাচ্ছিল এবং দিক পরিবর্তন করতে শুরু করে। তারা স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি গতিতে সাঁতার কাটতে শুরু করে।

শুধু তাই নয়, অনেক সময় তারা সাঁতার বন্ধ করে দেয় এবং ট্যাঙ্কের একপাশে গিয়ে স্থির হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পেঙ্গুইনের কাছাকাছি আসার ঝুঁকি এড়াতে তারা এমনটা করে।

গবেষণায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, পেঙ্গুইনের বর্জ্য মিশ্রিত পরিবেশে ক্রিলদের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ প্রায় ৬৪ শতাংশ কমে যায়।

অর্থাৎ, তারা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম খাবার গ্রহণ করে।

এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন ড. নিকোল হেলেসি। তিনি বলেন, “ক্রিলরা আসলে তাদের আশেপাশে থাকা বিপদ সম্পর্কে সচেতন।

তারা জানে, পেঙ্গুইন তাদের শিকার করতে পারে। তাই পেঙ্গুইনের বর্জ্য তাদের কাছে এক ধরনের সতর্কবার্তা।”

অ্যান্টার্কটিকার পরিবেশে প্রায় ৭০০ ট্রিলিয়ন ক্রিলের বাস। তাই, এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য এই অঞ্চলের খাদ্য শৃঙ্খল সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণা আরও সমৃদ্ধ করবে।

ড. হেলেসি আরও জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পেঙ্গুইনরা নতুন অঞ্চলে বসতি স্থাপন করছে বা আগের চেয়ে বেশি সময় ধরে একই অঞ্চলে থাকছে। এর ফলে ক্রিলদের উপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি হতে পারে।

তবে, ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির সমুদ্রবিজ্ঞানী ড. কিম বার্নার্ড এই গবেষণার ফলাফলের ব্যাপকতা নিয়ে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেন। তাঁর মতে, পেঙ্গুইনের বর্জ্যের কারণে ক্রিলদের মধ্যে যে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, তা পুরো বাস্তুতন্ত্রের উপর কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখনই বলা কঠিন।

কারণ, পেঙ্গুইনের বর্জ্য সব জায়গায় একই পরিমাণে থাকে না।

ড. হেলেসি ভবিষ্যতে অন্যান্য শিকারীর বর্জ্যের প্রতি ক্রিলদের আচরণ এবং বর্জ্যের বিভিন্ন ঘনত্বের কারণে তাদের মধ্যে কী ধরনের পরিবর্তন হয়, তা নিয়ে গবেষণা করতে চান।

ক্ষুদ্র হলেও, ক্রিল যে বিশাল একটি অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এই গবেষণাটি তা আরও একবার প্রমাণ করে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *