পেঙ্গুইনদের গোপন রহস্য উন্মোচন, যা আগে কেউ দেখেনি!

আফ্রিকার দক্ষিণে বরফাবৃত অ্যান্টার্কটিকা থেকে শুরু করে দক্ষিণ আমেরিকার সুদূর প্রান্ত পর্যন্ত, পেঙ্গুইনদের জীবনযাত্রা সবসময়ই মানুষের কাছে এক বিস্ময়। প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার অসাধারণ ক্ষমতা তাদের, যা পরিবেশ বিজ্ঞানীদের কাছে আজও এক গভীর আগ্রহের বিষয়।

সম্প্রতি, এই পেঙ্গুইনদের জীবন ও তাদের সংরক্ষণে নিবেদিতপ্রাণ দুই অনুসন্ধানীকে সম্মানিত করেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি। তারা হলেন, আর্জেন্টিনার পাবি “পপি” গার্সিয়া বোরবোরোগলু এবং ব্রিটিশ বন্যপ্রাণী চলচ্চিত্র নির্মাতা বার্টি গ্রেগরি।

পপি গার্সিয়া বোরবোরোগলু একজন মেরিন জীববিজ্ঞানী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পেঙ্গুইন সংরক্ষণে কাজ করছেন এবং বর্তমানে ‘গ্লোবাল পেঙ্গুইন সোসাইটি’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট।

তাঁর নিরলস প্রচেষ্টার ফলে প্রায় ৩ কোটি ২০ লক্ষ একরের বেশি ভূমিতে পেঙ্গুইনদের আবাসস্থল সুরক্ষিত হয়েছে। বোরবোরোগলু মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পেঙ্গুইনদের জীবনযাত্রায় যে পরিবর্তন আসছে, তা খুবই উদ্বেগের।

এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতেও তাদের টিকে থাকার লড়াই তাকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়।

অন্যদিকে, বার্টি গ্রেগরি একজন খ্যাতিমান বন্যপ্রাণী চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের আসন্ন সিরিজ ‘সিক্রেটস অফ দ্য পেঙ্গুইনস’-এর প্রধান গল্পকার হিসেবে কাজ করছেন।

এই সিরিজে তিনি পেঙ্গুইনদের জীবনযাত্রার অজানা দিকগুলো তুলে ধরেছেন। অ্যান্টার্কটিকার আটকা বে-তে তিনি দুই মাসের বেশি সময় ধরে একটি বিশেষ প্রজাতির পেঙ্গুইনের জীবন পর্যবেক্ষণ করেছেন।

গ্রেগরি জানিয়েছেন, তিনি এমন কিছু দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করেছেন, যা আগে কেউ দেখেনি। বিশেষ করে, বাচ্চা পেঙ্গুইনদের প্রায় ৫০ ফুট উঁচু একটি জায়গা থেকে “বেস জাম্পিং”-এর মতো ঝাঁপ দেওয়ার দৃশ্য, যা দর্শকদের মন জয় করবে বলে তিনি মনে করেন।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিল টিফেন্থলার বলেছেন, “পপি গার্সিয়া বোরবোরোগলু এবং বার্টি গ্রেগরির কাজ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সহযোগিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বিজ্ঞান ও অসাধারণ গল্প বলার মাধ্যমে, তাঁরা শুধু পেঙ্গুইনদের সম্পর্কে আমাদের ধারণা গভীর করেন না, বরং তাদের রক্ষার জন্য বিশ্বব্যাপী পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করেন।”

এই সম্মাননা পাওয়ার পর, বোরবোরোগলু এবং গ্রেগরি দুজনেই তাঁদের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। তাঁদের মতে, বিভিন্ন ধরনের অনুসন্ধানী এবং বিশেষজ্ঞের এই স্বীকৃতি পাওয়াটা খুবই আনন্দের।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা বিষয়টির দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই, আমাদের সুন্দরবনের মতো উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়ছে।

তাই, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব আমাদের জন্য অপরিহার্য। পেঙ্গুইনদের জীবনযাত্রা থেকে আমরা শিখতে পারি, কীভাবে প্রতিকূলতাকে জয় করে টিকে থাকতে হয় এবং পরিবেশ রক্ষার জন্য আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *