যুক্তরাষ্ট্রে পেনিসিলিনের (Penicillin) সরবরাহ কমে যাওয়ায় সিফিলিস (Syphilis) রোগের চিকিৎসায় দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য এই সংকট মারাত্মক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি, ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফাইজার (Pfizer) তাদের ‘বিসিলিন এল-এ’ (Bicillin L-A) নামের একটি ইনজেকশন, যা দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে কাজ করে, তা বাজার থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই ইনজেকশনটি সিফিলিসের চিকিৎসায়, বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (Centers for Disease Control and Prevention – CDC) এর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে কনজেনিটাল সিফিলিস (Congenital Syphilis) বা জন্মগত সিফিলিসের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। ২০১২ সালে যেখানে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৩৫, সেখানে ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,৮০০ এর বেশি।
অর্থাৎ, এক দশকের ব্যবধানে এই হার ১০ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে সিফিলিসের সংক্রমণ বাড়ার কারণেই শিশুদের মধ্যে এই রোগের বিস্তার ঘটছে।
চিকিৎসকদের মতে, বিসিলিন এল-এ (Bicillin L-A) সিফিলিসের চিকিৎসায় খুবই কার্যকর একটি ওষুধ। এই ইনজেকশনটি পাওয়া না গেলে, অনেক সময় রোগীরা অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিন (Doxycycline) ব্যবহারের পরামর্শ পান।
কিন্তু গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি একমাত্র অনুমোদিত ও কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি। এই ইনজেকশন সময় মতো না পেলে গর্ভপাত, মৃত শিশু জন্ম নেওয়া, এমনকি নবজাতকের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এছাড়াও, শিশুর হাড় ও দাঁতের বিকৃতি, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তির সমস্যাসহ নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ফাইজার জানিয়েছে, তারা ঔষধের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তারা রোগীদের সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং সমস্যা সমাধানে দ্রুত কাজ করছে।
বর্তমানে তারা সরবরাহ সীমিত রেখেছে এবং রোগীদের জন্য বিশেষ আবেদন ফরম পূরণ করতে হচ্ছে।
ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে আগামী আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে নতুন করে ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যেই কিছু রাজ্যে গর্ভবতী নারীদের সিফিলিসের পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
নিউ মেক্সিকো (New Mexico) এবং মিনেসোটা (Minnesota)-এর মতো রাজ্যগুলোতে গর্ভবতী নারীদের একাধিকবার সিফিলিসের পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরীক্ষার ফল আসার আগেই আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ এবং সরবরাহ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা এবং গর্ভবতী নারীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
এই ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতেও ঔষধের গুণগত মান এবং প্রয়োজনীয় ঔষধের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন (CNN)