পেনাইন ওয়ে: ৬০ বছরেও আকর্ষণ কমেনি, আজও কি সেই পথ?

বাংলার সবুজ পথে: ইংল্যান্ডের পেনাইন ওয়ে-এর ৬০ বছর। উত্তর ইংল্যান্ডের পাহাড়-উপত্যকা জুড়ে বিস্তৃত পেনাইন ওয়ে।

শুধু একটি পথ নয়, এটি যেন প্রকৃতির মাঝে হেঁটে বেড়ানোর এক জীবন্ত ইতিহাস। ১৯৬০ এর দশকে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়া এই পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দেওয়ার অভিজ্ঞতা আজও অনেক মানুষের কাছে প্রিয়।

সম্প্রতি, এই পথের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে, আসুন, এর সৃষ্টি, বিবর্তন এবং হাঁটা পথের অধিকারের লড়াইয়ের গল্প শুনি।

পেনাইন ওয়ে-এর ধারণা আসে ১৯৩০ এর দশকে, যখন লেখক ও সমাজকর্মী টম স্টিফেনসন এর প্রস্তাবনা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থান তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা থেকে এই পথের জন্ম।

শুরুতে, হাঁটা পথের উপযোগী সরঞ্জাম ও সুযোগ-সুবিধা ছিল সীমিত। পঞ্চাশের দশকে, যখন নারীদের হাঁটার জন্য বিশেষ পোশাক পরতে হতো, সেই সময়ে জিন্স পরে হেঁটে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন জয়স নেভিল নামের এক তরুণী।

পেনাইন ওয়ে-এর পথটি প্রায় ৪৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ। ইয়র্কশায়ারের মালহাম টার্ন থেকে স্কটিশ সীমান্তের কাছে কার্ক ইয়েথলম পর্যন্ত বিস্তৃত এই পথে রয়েছে উঁচু-নিচু পাহাড়, সবুজ উপত্যকা আর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।

এক সময়ের দুর্গম পথ এখন অনেক বেশি সহজ হয়েছে, আধুনিক সরঞ্জাম ও সুযোগ-সুবিধার কারণে। এখন এখানে বিশ্রামাগার, গেস্ট হাউস, এবং ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

পথটি কেবল একটি ভ্রমণের স্থান নয়, এটি জনসাধারণের অধিকারের প্রতীকও। একসময়, এই পথে হাঁটাচলার স্বাধীনতা সীমিত ছিল, কারণ অনেক জায়গা ছিল ব্যক্তিগত মালিকানাধীন।

টম স্টিফেনসনের মূল লক্ষ্য ছিল, মানুষের জন্য প্রকৃতির দুয়ার খোলা রাখা। এই পথের মাধ্যমে, মানুষজন প্রকৃতির কাছাকাছি আসার সুযোগ পায়, যা তাদের অধিকারের পক্ষে এক শক্তিশালী পদক্ষেপ ছিল।

এই পথ ধরে হাঁটা মানে প্রকৃতির নীরবতা উপভোগ করা। পথের ধারে দেখা মেলে বিভিন্ন বন্য প্রাণী, যেমন হরিণ, যা প্রকৃতির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে।

এখানকার স্থানীয় সংস্কৃতিও পথটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। স্থানীয় গ্রামবাসীদের আন্তরিকতা এবং আতিথেয়তা এই পথটিকে আরও বেশি ভালোবাসার করে তোলে।

তবে, পথচলার অধিকার এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাইট টু রোম-এর মতো সংগঠনগুলো জনসাধারণের জন্য প্রকৃতির উন্মুক্ততা বাড়াতে কাজ করছে। তারা চাইছে, মানুষ যেন অবাধে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।

পেনাইন ওয়ে-এর ৬০ বছর পূর্তি, প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসার উদযাপন। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতির পথে হাঁটা কেবল একটি ভ্রমণ নয়, বরং এটি একটি অধিকার, যা আমাদের সকলের জন্য উন্মুক্ত হওয়া উচিত।

আসুন, আমরাও প্রকৃতির কাছাকাছি যাই, এই সুন্দর পথ ধরে হেঁটে আসি, আর প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করি।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *