মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র? চীন-রাশিয়ার তৎপরতায় উদ্বিগ্ন পেন্টাগন!

আকাশে সামরিক শক্তি প্রদর্শনে রাশিয়া ও চীনের তৎপরতা, উদ্বেগে যুক্তরাষ্ট্র।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়া ও চীন মহাশূন্যে তাদের সামরিক সক্ষমতা পরীক্ষার অংশ হিসেবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের মতে, দেশ দুটি মহাকাশকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া সম্প্রতি তাদের স্যাটেলাইটগুলোর মাধ্যমে আক্রমণ ও প্রতিরোধের কৌশল অনুশীলন করেছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল মহাকাশ বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধি করা।

কর্মকর্তারা দেখেছেন, রাশিয়ার কয়েকটি স্যাটেলাইট একত্রিত হয়ে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে থাকা অন্য একটি স্যাটেলাইটকে ঘিরে ধরেছে এবং এটিকে বিচ্ছিন্ন করেছে। এর মাধ্যমে তারা ভবিষ্যতে কিভাবে শত্রুপক্ষের মহাকাশযানকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে, তার একটি ধারণা দিয়েছে।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, রাশিয়ার মূল লক্ষ্য হলো মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করা। এছাড়াও, তাদের সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে, তারা মহাকাশে সম্ভাব্য সশস্ত্র সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

রাশিয়া মহাকাশে আমাদের সুবিধাগুলো কেড়ে নিতে চায় এবং তারা এর ফলে হওয়া কোনো ক্ষতির পরোয়া করে না।

ওই কর্মকর্তা

২০২১ সালে রাশিয়া একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল, যা তাদেরই একটি স্যাটেলাইটকে ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে মহাকাশে বিশাল ধ্বংসাবশেষ তৈরি হয় এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকা নভোচারীদের জরুরি অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছিল।

চীনের পক্ষ থেকেও গত এক বছরে মহাকাশে অনুরূপ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো হয়েছে। ডিসেম্বরে বেইজিং একাধিক স্যাটেলাইটকে কাছাকাছি অবস্থানে রেখে তাদের উন্নত সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে, যা সামরিক ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

তারা আক্রমণের কৌশল অনুশীলন করেছে… এগুলো উন্নত টহল এবং উন্নত কৌশল।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ওই কর্মকর্তা

চীন বর্তমানে অ্যান্টি-স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্র এবং লেজার বা অনুরূপ পদ্ধতির মাধ্যমে অন্য স্যাটেলাইটগুলোকে আক্রমণ করার মতো প্রযুক্তি তৈরি করছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, “চীন একটি পিপলস লিবারেশন আর্মি (PLA) মহাকাশ বাহিনী তৈরি করছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে মহাকাশের নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রস্তুত।

চীন এরই মধ্যে মহাকাশ প্রযুক্তিতে তাদের দ্রুত অগ্রগতি দেখিয়েছে। ২০২১ সালে তারা একটি মহাকাশ-থেকে- উৎক্ষেপণযোগ্য হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়, যা যুক্তরাষ্ট্রকে বিস্মিত করে।

তৎকালীন শীর্ষ মার্কিন জেনারেল এটিকে “খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত ঘটনা” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

মার্কিন স্পেস ফোর্সের কর্মকর্তারা রাশিয়া ও চীনের সামরিক সুবিধা অর্জনের পথ বন্ধ করতে তাদের নিজস্ব আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক মহাকাশ সক্ষমতা তৈরি করতে মনোযোগ দিয়েছেন। তাদের মতে, দেশ দুটি যেন কোনো ধরনের “ব্লিটজক্রিগ” স্টাইলে আক্রমণ করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।

চলার ক্ষমতা দুর্বল করে দিলে সুযোগ তৈরি হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা

তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির উদাহরণ টেনে আনেন, যখন তারা মিত্রশক্তির ট্যাংকগুলোর গতি কমিয়ে দিয়েছিল।

মার্কিন স্পেস ফোর্সের গোয়েন্দা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া ও চীনের তুলনায় মহাকাশে যুক্তরাষ্ট্রের এখনো কিছু সুবিধা রয়েছে। তবে উভয় দেশই সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে এবং মার্কিন প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে নতুন প্রযুক্তি তৈরি করছে।

১৯৬৭ সালের বহুজাতিক চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন—এই তিন দেশই মহাকাশে ব্যাপক ধ্বংসের অস্ত্র নিষিদ্ধ করতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, যা এই চুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে।

গত এপ্রিলে রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাবের বিরোধিতা করে, যেখানে মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার প্রতিরোধের কথা বলা হয়েছিল।

মার্কিন স্পেস ফোর্সের কর্মকর্তাদের মতে, চীন দ্রুত তাদের মহাকাশ সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে, যা দিয়ে তারা মার্কিন সামরিক বাহিনীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও তাদের ওপর আঘাত হানতে পারে।

ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত চীনের এক হাজারের বেশি স্যাটেলাইট ছিল, যা যুক্তরাষ্ট্রের পরেই সর্বোচ্চ।

মার্কিন স্পেস ফোর্সের গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, বেইজিং মনে করে, ভবিষ্যতের সংঘাতে মহাকাশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যা দূরপাল্লার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সহায়তা করবে।

ডিসেম্বর ২০২৪-এ চীন একটি দূর সংবেদনশীল স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের মতে, এটি তাদের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র বাহিনীর ওপর নজরদারি করতে সহায়তা করবে।

গোয়েন্দা তথ্য বলছে, PLA সম্ভবত আঞ্চলিক সংঘাতে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপকে প্রতিহত করতে কাউন্টারস্পেস অভিযানকে একটি উপায় হিসেবে দেখছে।

এ বিষয়ে একাধিক মার্কিন স্পেস ফোর্স কর্মকর্তার ভাষ্যমতে

তাঁরা আরও বলেন, “উপরন্তু, PLA বিশেষজ্ঞরা শত্রুর গোয়েন্দা, যোগাযোগ এবং পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট ধ্বংস করার ওপর জোর দেন, যাতে শত্রুকে ‘অন্ধ ও বধির’ করা যায়।”

মার্কিন স্পেস ফোর্স ইন্টেলিজেন্স হেডকোয়ার্টার্সের তথ্য অনুযায়ী, চীন ২০২৪ সালে ৬৬টি সফল মহাকাশ উৎক্ষেপণ করেছে, যার মধ্যে ৬৭টি গোয়েন্দা, নজরদারি ও অনুসন্ধানে সক্ষম স্যাটেলাইট ছিল।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *