মাসিক ঋতুস্রাব: লজ্জা ভেঙে সচেতনতার আলো (Menstruation: Breaking Shame, Spreading Awareness)
মাসিক ঋতুস্রাব বা মেনস্ট্রুয়েশন (Menstruation) একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। একজন নারীর জীবনে এই সময়টি অনেক পরিবর্তনের সূচনা করে।
প্রতি মাসে নারীদের শরীর এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায়, যা তাদের প্রজনন স্বাস্থ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু আজও, একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও, এই স্বাভাবিক বিষয়টিকে ঘিরে সমাজে অনেক দ্বিধা, লজ্জা এবং গোপনীয়তা বিদ্যমান।
বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ঋতুস্রাব সম্পর্কে ভিন্ন ধারণা প্রচলিত রয়েছে। কোনো সংস্কৃতিতে এটিকে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়, আবার কোনো সংস্কৃতিতে এটিকে লজ্জার বিষয় হিসেবে দেখা হয়।
আমাদের সমাজে, বিশেষ করে বাংলাদেশে, এই বিষয়ে আলোচনা করাটা এখনো অনেক ক্ষেত্রে কঠিন।
ইসলাম ধর্মে ঋতুস্রাবকে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা হয়। পবিত্র কোরআনে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে নারীদের নামাজ ও রোজা থেকে বিরত থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, এই সময়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন থেকেও আমরা ঋতুস্রাব সম্পর্কে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় জানতে পারি। তিনি ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে নারীদের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা দেখিয়েছেন।
হযরত আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে তাঁর আচরণে ঋতুস্রাবের সময় নারী-পুরুষের সম্পর্কের গভীরতা ফুটে উঠেছে।
আমাদের সমাজে, বিশেষ করে মায়েদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তাঁদের মেয়েদের ঋতুস্রাব সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়ার ক্ষেত্রে। প্রথম মাসিক শুরু হওয়ার আগে মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন এবং মানসিক প্রস্তুতি সম্পর্কে জানানো প্রয়োজন।
এই বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকলে, মেয়েরা বিভিন্ন কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণার শিকার হতে পারে। অনেক সময়, তারা তাদের বন্ধুদের কাছ থেকে ভুল তথ্য পায়, যা তাদের মধ্যে ভীতি ও উদ্বেগের সৃষ্টি করে।
মাসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে পরিবার, বিদ্যালয় এবং সমাজের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বিদ্যালয়ে মাসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে ছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা যেতে পারে।
সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (NGO) এই বিষয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে, যেমন স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
মাসিক ঋতুস্রাব বিষয়ক লজ্জা দূরীকরণে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনা জরুরি। সবার আগে প্রয়োজন এই বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করা।
মেয়েদের ঋতুস্রাবকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সমর্থন দেওয়া উচিত। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
আসুন, আমরা সবাই মিলে মাসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করি এবং ঋতুস্রাবকে ঘিরে থাকা সকল দ্বিধা ও লজ্জার দেয়াল ভেঙে ফেলি। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, নারীরা একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা