আদিবাসী ভূমি: তেল খনন বন্ধ, আনন্দে পেরুর আমাজনবাসী!

পেরুর আমাজন অঞ্চলে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূখণ্ডে তেল উত্তোলনের পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় উল্লাস প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। দেশটির রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেট্রোপেরু আদিবাসী কয়েকটি গোষ্ঠীর এলাকা জুড়ে থাকা একটি তেল ক্ষেত্র খননের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিল।

কিন্তু এতে কোনো সাড়া মেলেনি, খবর এপি’র।

আদিবাসী আচুয়ার, ওয়াম্পিস এবং চাপরা জাতির মানুষের আদিবাসী অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ‘ব্লক ৬৪’ এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয়দের প্রতিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।

বৃহস্পতিবার পেট্রোপেরুর এই দরপত্র ব্যর্থ হওয়ায় ওই অঞ্চলে তেল উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা বড় ধাক্কা খেয়েছে।

চাপরা জাতির স্বশাসিত আঞ্চলিক সরকারের প্রেসিডেন্ট ওলিভিয়া বিসা তিরকো এপিকে ফোনে জানান, “এত কষ্টের মধ্যে এটা দারুণ খবর, যেন স্বস্তি ফিরে এসেছে।

তবে আমরা সতর্ক রয়েছি।”

পেট্রোপেরু এক লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি কোম্পানি ব্লক ৬৪-এ আগ্রহ দেখালেও শেষ মুহূর্তে কৌশলগত কারণে তারা সরে যায়, বাইরের কোনো চাপ ছিল না।

আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিরোধিতার বিষয়টিও তারা অস্বীকার করেছে।

কোম্পানির দাবি, স্থানীয় মানুষ তেল উন্নয়নের পক্ষে এবং তারা দ্রুত কাজ শুরুর জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।

এছাড়াও, প্রকল্পটি শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় ‘সামাজিক অনুমোদন’ তাদের রয়েছে বলেও তারা জানায়।

আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো ১৯৯৫ সাল থেকে এই অঞ্চলে তেল উত্তোলনের বিরোধিতা করে আসছে।

পরিবেশগত এবং অধিকার রক্ষার উদ্বেগের কারণে তারা বিভিন্ন কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।

২০২২ সালে পেট্রোপেরু ব্লক ৬৪-এর নিয়ন্ত্রণ নেয়।

এই এলাকাটি একটি তেল ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত, যেখানে সরকার নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মধ্যে তেল অনুসন্ধান এবং উত্তোলনের অধিকার দিয়েছে।

বিসা তিরকো বলেন, “পেরুর সরকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে কোনো আলোচনা বা তাদের সম্মতি ছাড়াই এই অঞ্চলের ইজারা দেওয়ার পর থেকেই আমরা এর বিরুদ্ধে লড়াই করছি।

২৫ বছরের বেশি সময় ধরে আমরা একটি সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশে বাঁচার অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছি।”

বিষয়টি অ্যামাজনে তেল উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিদ্যমান আইনি, পরিবেশগত এবং সুনাম-সংক্রান্ত ঝুঁকিগুলোকেই সামনে নিয়ে আসে।

অ্যামাজন ওয়াচ নামক একটি সংস্থার অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর অ্যান্ড্রু মিলার জানান, স্থানীয়দের জোরালো বিরোধিতার কারণে ১৯৯৫ সাল থেকে বেশ কয়েকটি বহুজাতিক তেল কোম্পানি ব্লক ৬৪-এর উন্নয়ন থেকে বিরত ছিল।

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য তেল ক্ষেত্র থেকে নির্গত দূষণ অ্যামাজনের অন্য কমিউনিটিগুলোর জীবনযাত্রায় মারাত্মক ক্ষতি করেছে।

মিলার বলেন, “প্রতিটি দিন যখন তেল প্রবাহিত হয় না, তখন তারা আগের মতোই তাদের জীবন ধারণের জন্য নদী ব্যবহার করতে পারে।”

মিলার আরও বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ব্লক ৬৪-এর উন্নয়নে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করলেও, কোনো লাভ হয়নি।

এটা থেকে বোঝা যায়, এই শিল্প এখন এটিকে একটি ব্যয়বহুল, লোকসানের জায়গা হিসেবে দেখছে।

তিনি মনে করেন, পেরু সরকার ব্লক ৬৪-এর উন্নয়নকে উৎসাহিত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবে।

“স্থানীয় সম্প্রদায় এবং তাদের মিত্ররা এই ‘zombie প্রজেক্ট’-এর ওপর কড়া নজর রাখবে, যা বহুবার ব্যর্থ হলেও আবার ফিরে আসার চেষ্টা করে,” যোগ করেন মিলার।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *