পেরুর একটি প্রাচীন স্থানে, যেখানে একসময় বিশাল চ্যাভিন সাম্রাজ্যের বিস্তার ছিল, সেখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে মাদক সেবনের প্রমাণ মিলেছে। বিজ্ঞানীরা একটি গোপন কক্ষে বিশেষ কিছু দ্রব্য খুঁজে পেয়েছেন যা প্রাচীনকালে মাদক ব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়।
এই আবিষ্কার সেই সময়ের মানুষের জীবনযাত্রা এবং সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে নতুন ধারণা দেয়।
পেরুর পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত চাভিন দে হুয়ান্তার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি একসময় ছিল চ্যাভিন সংস্কৃতির কেন্দ্র। এই সংস্কৃতি খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ থেকে ২০০ অব্দ পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল।
সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা এখানে একটি গোপন কক্ষ আবিষ্কার করেছেন, যা আগে সিল করা ছিল। এই কক্ষে পাওয়া গেছে ২৩টি বিশেষ বস্তু, যা মনকে প্রভাবিত করতে পারে এমন উদ্ভিদের সঙ্গে সম্পর্কিত।
এর মধ্যে ছিল পাখির হাড় দিয়ে তৈরি “স্নুফ টিউব”, যা সম্ভবত মাদক সেবনের কাজে ব্যবহৃত হতো।
গবেষণায় জানা গেছে, এই স্থানে তামাক এবং ডিএমটি (DMT)-এর মতো কিছু মাদকদ্রব্যের অস্তিত্ব ছিল। ডিএমটি সাধারণত আয়াহুয়াস্কা নামক এক ধরনের মাদকদ্রব্যের মধ্যে পাওয়া যায়।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই আবিষ্কার প্রাচীনকালে আনুষ্ঠানিক মাদক ব্যবহারের প্রথম প্রত্যক্ষ প্রমাণ। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ ড্যানিয়েল কন্ট্রেরাস এই বিষয়ে বলেছেন, “এই টিউবগুলো অনেকটা সিনেমার দৃশ্যের মতো, যেখানে ধনী ব্যক্তিরা কোকেন নেওয়ার জন্য রোল করা কাগজ ব্যবহার করে।”
ছোট আকারের কক্ষগুলি সম্ভবত ইঙ্গিত করে যে, মাদক সেবন সমাজের কিছু বিশেষ শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সম্ভবত শুধুমাত্র সমাজের উচ্চ শ্রেণির মানুষেরাই এই ধরনের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারত।
কন্ট্রেরাস আরও যোগ করেছেন, “এই প্রমাণগুলি থেকে বোঝা যায়, মনকে প্রভাবিত করতে পারে এমন উদ্ভিদগুলি ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যবহার না হয়ে সুসংগঠিত এবং নিয়ন্ত্রিত আচার-অনুষ্ঠানের অংশ ছিল। সম্ভবত এই ধরনের রীতি-নীতি আদিম সমাজ থেকে বৃহত্তর এবং স্তরবিন্যাসযুক্ত সমাজে উত্তরণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল।”
এই আবিষ্কার চ্যাভিন সংস্কৃতির মানুষের জীবনযাত্রা এবং সামাজিক কাঠামো সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ভবিষ্যতের গবেষণাগুলি প্রাচীন পেরুর এই সংস্কৃতির আরও অজানা দিকগুলো সম্পর্কে আলোকপাত করবে।
তথ্য সূত্র: পিপল