পেরু: প্রকৃতির লীলাভূমি ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
দক্ষিণ আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম দেশ পেরু, যা ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এক অসাধারণ গন্তব্য। একদিকে যেমন এখানকার পর্বতমালা, রেইনফরেস্ট, মরুভূমি আর সমুদ্র উপকূল, তেমনই এখানকার সংস্কৃতি, ইতিহাস আর খাদ্যরসিকতাও অনন্য। বাংলাদেশের মানুষের কাছে পেরু সম্পর্কে তুলে ধরার মতো অনেক কিছুই রয়েছে।
পেরুর উত্তরে রয়েছে ইকুয়েডর ও কলম্বিয়া, পূর্বে ব্রাজিল, দক্ষিণে বলিভিয়া ও চিলি এবং পশ্চিমে বিশাল প্রশান্ত মহাসাগর। দেশটির আয়তন প্রায় ১২ লক্ষ ৮৫ হাজার বর্গকিলোমিটার, যা এটিকে দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম বৃহৎ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
এই বিশাল ভূখণ্ডের কারণে এখানকার জলবায়ুও বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। উপকূলীয় অঞ্চলে শুষ্ক ও উপ-ক্রান্তীয় মরুভূমি দেখা যায়, আবার আমাজন অঞ্চলে রয়েছে উষ্ণ ও আর্দ্র ক্রান্তীয় বৃষ্টি বন। অন্যদিকে, আন্দিজ পর্বতমালায় আলপাইন ও পার্বত্য অঞ্চলের আবহাওয়া বিদ্যমান।
পেরু শুধুমাত্র প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরপুর নয়, বরং এর সংস্কৃতিও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানে প্রায় ৪৭টির বেশি আদিবাসী ভাষায় কথা বলা হয়, যদিও স্প্যানিশ, কুইচুয়া এবং আয়মারা – এই তিনটি ভাষা সরকারিভাবে স্বীকৃত।
পেরুর রাজধানী ও বৃহত্তম শহর হলো লিমা, যেখানে দেশটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লোকের বাস। এখানকার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আরেকুইপা, যেখানে এক মিলিয়নের বেশি মানুষের বসবাস।
পেরুর সংস্কৃতিতে ইনকা সাম্রাজ্যের প্রভাব আজও বিদ্যমান। কুইচুয়া ভাষায় ইনকা সাম্রাজ্যকে বলা হয় ‘তাহুয়ানতিনসুয়ো’, যার অর্থ ‘চার অঞ্চলের মিলন’। এই সাম্রাজ্য একসময় পেরু, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, বলিভিয়া, চিলি ও ইকুয়েডরের কিছু অংশজুড়ে বিস্তৃত ছিল।
এখানকার মাচু পিচু, যা নতুন সপ্তাশ্চর্যের একটি, প্রতি বছর প্রায় ১৬ লক্ষ পর্যটকের আকর্ষণ করে।
পেরুর খাদ্যরসিকতাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এখানকার আলু, ভুট্টা এবং সি ফুড-এর বিভিন্ন পদ বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। পেরুতে আলুর প্রায় ৪,০০০-এর বেশি প্রজাতি রয়েছে, যা এই দেশকে আলুর এক বিশাল ভাণ্ডারে পরিণত করেছে।
এখানকার জাতীয় খাবার ‘সিভিচে’, যা কাঁচা মাছকে লেবুর রসে ভিজিয়ে তৈরি করা হয়। এছাড়াও, ভুট্টা দিয়ে তৈরি ‘পাচামানকা’ এবং ‘হিউমিটাস’-এর মতো পদগুলোও বেশ পরিচিত।
পেরুর একটি বিশেষ আকর্ষণ হলো এখানকার ‘নাসকা লাইনস’। এটি মরুভূমির বুকে তৈরি করা বিশাল আকারের কিছু চিত্র, যা আজও মানুষের কাছে এক রহস্য। ধারণা করা হয়, নাসকা সভ্যতার লোকেরা খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ থেকে ৫০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই চিত্রগুলো তৈরি করেছিল।
এখানকার মারা অঞ্চলে লবণ তৈরির ঐতিহ্যও ৫০০ বছরের পুরনো।
পেরুর সংস্কৃতিতে আলপাকা ও ভিকুনার মতো প্রাণীদের বিশেষ স্থান রয়েছে। এখানকার আলপাকা থেকে উৎপাদিত পশম দিয়ে পোশাক তৈরি করা হয়। পেরু বিশ্বের বৃহত্তম আলপাকা উৎপাদক দেশ।
এখানকার ভিকুনার পশম অত্যন্ত মূল্যবান, যা একসময় রাজপরিবারের জন্য সংরক্ষিত ছিল।
পেরুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে অন্যতম হলো ‘রেনবো মাউন্টেন’, যা কুস্কো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এছাড়াও, এখানকার কোটাহুয়াসি ক্যানিয়ন বিশ্বের গভীরতম ক্যানিয়নগুলোর মধ্যে একটি।
পেরুর মুদ্রা হলো ‘নুয়েভো সল’। দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থাপত্য, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি আর খাদ্যরসিকতা – সব মিলিয়ে পেরু ভ্রমণ সত্যিই একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে। বাংলাদেশের ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য পেরু হতে পারে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।
তথ্য সূত্র: Travel and Leisure