ইংল্যান্ড ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, পিটার লেভার, ৮৪ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। একজন ফাস্ট বোলার হিসেবে পরিচিত লেভার ১৯৭০-এর দশকে ইংল্যান্ডের হয়ে ১৭টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন। তাঁর ক্রিকেট জীবনের শুরুটা হয় অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে, তবে কঠোর পরিশ্রম ও নিবেদনের মাধ্যমে তিনি দ্রুতই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
লেভারের ক্রিকেটে আসার গল্পটা বেশ চমকপ্রদ। টডমর্ডেন ক্রিকেট ক্লাবে তিনি সাধারণত উইকেটকিপিং করতেন এবং মাঝে মাঝে অফ-স্পিন বোলিংও করতেন। একদিন নেটে অনুশীলনের সময়, ক্লাবের পেশাদার খেলোয়াড় সিলভেস্টার অলিভারের বিপক্ষে দ্রুত গতির বোলারের অভাব দেখা দিলে লেভারকে সেই দায়িত্ব নিতে হয়। সেই সুযোগেই তিনি নিজের গতির ঝলক দেখিয়ে সকলের নজর কাড়েন। এরপরই যেন তাঁর জীবন মোড় নেয়, এবং ১৯ বছর বয়সে তিনি ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে খেলার সুযোগ পান।
লেভারের কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা ছিল প্রশংসনীয়। তিনি সবসময় দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। তাঁর ডেডিকেশন সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার নীল ড্যানসি মন্তব্য করেছিলেন, “যে ছেলেটা সবার আগে আসে এবং সবার পরে যায়, সে ভালো করবেই।” লেভারও সেই কথা প্রমাণ করেছিলেন, কারণ কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমেই তিনি ইংল্যান্ড দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন।
১৯৭০ সালে ওভালে একটি ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তাঁর আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়। সেই ম্যাচে তিনি ৭ উইকেট শিকার করে নিজের জাত চেনান। এরপর ১৯৭০-৭১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাশেজ সিরিজে তাঁর অন্তর্ভুক্ত হওয়াটা ছিল একটি বড় ঘটনা। যদিও অনেকেই তাঁর নির্বাচন নিয়ে দ্বিধা প্রকাশ করেছিলেন, তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে তিনি কতটা নির্ভরযোগ্য।
লেভারের খেলোয়াড়ি জীবনের একটি দুঃখজনক অধ্যায় হলো ১৯৭৫ সালে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যান ইওয়েন চ্যাটফিল্ডকে আহত করার ঘটনা। তাঁর বাউন্সারে চ্যাটফিল্ড গুরুতরভাবে আহত হন। এই ঘটনার পর লেভার এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে খেলা ছাড়ার কথা ভেবেছিলেন। চ্যাটফিল্ড অবশ্য পরে সুস্থ হয়ে আরও ৪২টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন, কিন্তু লেভারের খেলোয়াড়ি জীবনে এর প্রভাব পড়েছিল।
পিটার লেভার ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে ৭৯৬টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট শিকার করেছেন। খেলার মাঠের বাইরেও তিনি কোচ হিসেবে ক্রিকেটকে অনেক দিয়েছেন। তাঁর এই অবদান ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
