পোষা প্রাণী: আপনার হৃদয়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এরা কীভাবে সাহায্য করে?

পোষা প্রাণী: আপনার হৃদয়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় এক নতুন বন্ধু।

আজকাল মানুষের জীবনযাত্রায় বাড়ছে মানসিক চাপ। কর্মব্যস্ততা, পারিবারিক সমস্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কারণে শরীরে বাসা বাঁধে দুশ্চিন্তা। আর এই চাপ কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে একটি নিরীহ প্রাণী—আপনার প্রিয় পোষ্য।

সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পোষা প্রাণী, বিশেষ করে কুকুর ও বিড়াল, আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটান, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম থাকে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (AHA) এর মতে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পোষা প্রাণী, বিশেষ করে কুকুর, একটি ভালো উপায় হতে পারে।

তাহলে আসুন, জেনে নেওয়া যাক কীভাবে আপনার পোষ্য আপনার হৃদয়ের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে পারে:

  • মানসিক চাপ কমায়: পোষা প্রাণীর সান্নিধ্য আমাদের মনকে শান্ত করে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (National Institutes of Health) এর মতে, পোষা প্রাণী মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরে কর্টিসোলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। কর্টিসোল হলো স্ট্রেস হরমোন, যা বেড়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের সমস্যা হতে পারে।

অনেকেই হয়তো জানেন না, মাছের অ্যাকুরিয়াম দেখলে বা অ্যাকুরিয়ামের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।

  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা: বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বিড়াল এবং কুকুরের মালিকদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা অন্যদের তুলনায় কম হয়।

২০২২ সালের একটি গবেষণা বলছে, বিড়াল রয়েছে এমন মানুষেরা অন্যদের চেয়ে ৪২ শতাংশ কম হারে উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। আর কুকুর যাদের আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই হার ৩১ শতাংশ।

পোষ্যের সঙ্গে কাটানো সময়, যেমন—তাদের আদর করা বা তাদের সঙ্গে খেলা করা—রক্তচাপ কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

  • শারীরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি: পোষা প্রাণী, বিশেষ করে কুকুরের মালিকরা অন্যদের চেয়ে বেশি সক্রিয় থাকেন।

কারণ তাদের প্রতিদিন কুকুরকে নিয়ে হাঁটতে বা খেলতে যেতে হয়। ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কুকুরের মালিকরা, যাদের কুকুর নেই তাদের চেয়ে প্রতিদিন গড়ে ২২ মিনিট বেশি হাঁটেন।

নিয়মিত হাঁটা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: পোষ্যদের দেখাশোনার কারণে অনেক সময় মানুষ নিজের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কেও সচেতন হয়।

পোষ্যের স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে নজর রাখতে গিয়ে অনেকে নিজেদের খাবার মেনুতেও পরিবর্তন আনেন, যা সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

  • হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস: গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কুকুর ভালোবাসেন, তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

এছাড়াও, যেকোনো ধরনের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিও ৩১ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করে কুকুর।

তবে, একটি বিষয় মনে রাখতে হবে—পোষ্য গ্রহণ করার মূল উদ্দেশ্য কেবল স্বাস্থ্য ভালো করা হওয়া উচিত নয়।

কারণ একটি প্রাণীর জীবন আপনার হাতে, তাই তাদের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্বশীল হওয়া অপরিহার্য। আপনি যদি সত্যিই কোনো প্রাণীকে ভালোবাসেন এবং তার যত্ন নিতে প্রস্তুত থাকেন, তবে আপনার সুস্থ হৃদয়ের জন্য একটি পোষ্য হতে পারে দারুণ এক বন্ধু।

তথ্যসূত্র: হেলথলাইন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *