পুরুষাঙ্গের প্রতীক, নগ্ন নিতম্ব আর যোদ্ধাদের ভঙ্গি: কেমন করে ‘ফিজিক ম্যাগাজিন’ গে সম্প্রদায়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
বিগত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, যখন আমেরিকায় গে সম্প্রদায়ের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল খুবই রক্ষণশীল, সেই সময়ে এক ধরনের ম্যাগাজিন বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। এইসব ম্যাগাজিন, যা ‘ফিজিক ম্যাগাজিন’ নামে পরিচিত ছিল, মূলত পুরুষাঙ্গের ছবি দিয়ে সাজানো হত।
এই ম্যাগাজিনগুলো গে পুরুষদের মধ্যে গোপন যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করত। ম্যাগাজিনগুলোতে সুঠাম দেহের পুরুষদের ছবি থাকত, যা গে পুরুষদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করত এবং তাদের মধ্যে এক ধরনের পরিচিতি তৈরি করত।
তখনকার সময়ে, এই ধরনের ম্যাগাজিন প্রকাশ করা বেশ কঠিন ছিল। সরকার এবং সমাজের কড়া নজরদারির কারণে, ম্যাগাজিনগুলো প্রায়ই স্বাস্থ্য ও ফিটনেস বিষয়ক প্রকাশনা হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিত।
কিন্তু তাদের ছবি এবং বিষয়বস্তু গে পুরুষদের রুচি ও চাহিদার কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হতো।
সম্প্রতি, ভিন্স অ্যালেত্তি নামের একজন লেখক এই ম্যাগাজিনগুলোর ছবি নিয়ে একটি নতুন বই লিখেছেন, যার নাম ‘ফিজিক’। অ্যালেত্তি এই ছবিগুলোকে নিছক ঐতিহাসিক দলিল বা “পর্ন-সংশ্লিষ্ট” বস্তু হিসেবে দেখতে নারাজ।
তাঁর মতে, এই ছবিগুলো আসলে শিল্পকর্ম। তিনি ছবিগুলোর শৈল্পিক দিকটির ওপর জোর দিয়েছেন। ছবিগুলোতে মডেলদের ভঙ্গি, আলোর ব্যবহার এবং দৃশ্যের বিন্যাস— সবকিছুই ক্লাসিক্যাল শিল্পের আদলে তৈরি করা হয়েছে।
আর্টের এই ধারাটির পেছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন বব মাইজার। তিনি ‘অ্যাথলেটিক মডেল গিল্ড’ (এএমজি) নামে একটি সংস্থা তৈরি করেন, যা এই ধরনের ছবি তৈরিতে সাহায্য করত।
মাইজারের তত্ত্বাবধানে, লস অ্যাঞ্জেলেসের আশেপাশে অনেক ছবি তোলা হয়েছিল, যেখানে মডেলরা তাদের সুঠাম শরীর প্রদর্শন করতেন।
এই ম্যাগাজিনগুলোর মডেলদের মধ্যে অন্যতম পরিচিত একটি নাম ছিলেন জো ডালেসান্দ্রো। তিনি ওয়ারহলের মতো বিখ্যাত শিল্পী ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন।
ম্যাগাজিনগুলোতে ছবি তোলার সময়, আলোকচিত্রীরা মডেলদের শরীরের কিছু অংশ, যেমন— পুরুষাঙ্গ— ঢেকে দিতেন। তবে, অনেক সময় নিতম্বের ছবিও দেখা যেত।
এই ম্যাগাজিনগুলো গে সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে শুধু বিনোদনের মাধ্যম ছিল না, বরং তাদের মধ্যে আত্ম-প্রকাশের সুযোগ তৈরি করেছিল।
ম্যাগাজিনে ছবি তোলার জন্য মডেলরা তাদের নাম ও ঠিকানা দিতেন, যা সেই সময়ের গে পুরুষদের জন্য একটি বিশাল সাহসী পদক্ষেপ ছিল।
এই ম্যাগাজিনগুলো গে সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ের আন্দোলনেও কিছুটা হলেও সাহায্য করেছে।
তবে, ১৯৮০-এর দশকে এই দৃশ্যে মাদক এবং এইডস-এর প্রভাব দেখা যায়। এর ফলে অনেক শিল্পী ও আলোকচিত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, ‘ফিজিক ম্যাগাজিন’-এর ধারণাটি পরিবর্তিত হয়েছে। তবে, এই ম্যাগাজিনগুলো গে সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি এবং শিল্পের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান