খাবারের টানে বিশ্ব ভ্রমণ: ফিল রোসেনথালের অজানা গল্প!

পর্যটকদের খাদ্যরসিক হিসেবে পরিচিত ফিল রোজেনথাল, যিনি নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘সামবডি ফিড ফিল’-এর উপস্থাপক। সম্প্রতি তার ভ্রমণ বিষয়ক অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

কিভাবে তিনি বিশ্ব ভ্রমণে আগ্রহী হলেন, কিভাবেই বা এই অনুষ্ঠানটি তৈরি হলো, সেই গল্প শুনলে হয়তো অনেকেরই ভ্রমণ করতে ইচ্ছে করবে।

ছোটবেলায় আটলান্টার একটি সেভেন-ইলেভেনে স্লার্পি খাওয়ার পরেই রোজেনথালের মনে হয়েছিল, ‘আরে, আমার তো আরো বেশি ভ্রমণ করা দরকার!’ এরপর ২৩ বছর বয়সে প্রথমবার প্যারিস ও ফ্লোরেন্স ভ্রমণে গিয়ে তার জীবনটাই বদলে যায়।

সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রোজেনথালের জীবনকে নতুন দিশা দেয়। এরপর থেকেই রোজেনথাল তার উপার্জিত অর্থ ভ্রমণের জন্য জমাতে শুরু করেন।

রোজেনথালের এই ভ্রমণের আগ্রহের পেছনে রয়েছে একটি মজার ঘটনা। ‘এভরিবডি লাভস রেমন্ড’–এর লেখক হিসেবে কাজ করার সময় অভিনেতা রে রোমানোর সঙ্গে তার আলাপ হয়।

রোজেনথাল জানতে পারেন, রোমানো অবকাশ যাপনের জন্য নিউ জার্সির সমুদ্রসৈকতে যাচ্ছেন। তখন রোজেনথাল কৌতূহল নিয়ে জানতে চান, তিনি এর আগে কখনো ইউরোপে গিয়েছেন কিনা।

রোমানো জানান, যাননি, কারণ তার কাছে ইউরোপ ভ্রমণের তেমন কোনো আকর্ষণ নেই।

এই ঘটনার পরেই রোজেনথাল বিষয়টি নিয়ে একটি পর্ব লেখার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জানান, ‘আমি এমন একটি পর্ব বানালাম যেখানে দেখানো হয়, রে ইতালি ভ্রমণে গিয়ে সেখানকার সংস্কৃতিতে মুগ্ধ হচ্ছেন।’

এই পর্বটি তৈরি করতে প্রায় তিন বছর সময় লেগেছিল। এই অভিজ্ঞতাই রোজেনথালকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছিল।

তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এই ধরনের অভিজ্ঞতা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যায়। এই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় ‘সামবডি ফিড ফিল’-এর।

অনুষ্ঠানটির সাফল্যের পেছনে রোজেনথালের কঠোর পরিশ্রম ছিল। অনেকেই হয়তো মনে করেন, ‘রেমন্ড’–এর মতো জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠানের পর তার জন্য একটি নতুন অনুষ্ঠান তৈরি করা সহজ ছিল।

কিন্তু সত্যি বলতে, এই কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। এই স্বপ্নের পেছনে তাকে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।

তবে তিনি মনে করেন, এই সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত সার্থক হয়েছে।

ভ্রমণের সময় রোজেনথালের কিছু পছন্দের খাবার রয়েছে। বিমানে ভ্রমণের সময় বাদাম খেতে ভালোবাসেন তিনি।

এছাড়াও, বিমানে পরিবেশিত খাবারের চেয়ে তিনি বিমানবন্দরের লাউঞ্জে বা ফ্লাইট ছাড়ার আগে খাবার খেতে বেশি পছন্দ করেন।

একবার কোরিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানে তিনি স্যামগে-টাং স্যুপ খেয়েছিলেন, যেখানে পুরো একটি বাচ্চার মুরগি দেওয়া হয়েছিল।

তার মতে, সেই খাবারটি ছিল অসাধারণ।

রোজেনথালের মতে, ভ্রমণের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মনে রাখতে হয়। যেমন— কোনো স্থানের আকর্ষণীয় রেস্টুরেন্টগুলো এড়িয়ে যাওয়া উচিত, যেখানে শুধুমাত্র পর্যটকদের জন্য মেনু থাকে।

এছাড়াও, ভ্রমণের সময় পছন্দের খাবার হিসেবে তিনি পারমিজান রিজিওনো পনির সঙ্গে নিতে ভালোবাসেন।

‘সামবডি ফিড ফিল’-এর নতুন সিজনে, রোজেনথাল আমস্টারডাম, জর্জিয়ার তিবিলিসি, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ও অ্যাডিলেইড, ফিলিপাইনের ম্যানিলা, লাস ভেগাস, বোস্টন এবং গুয়াতেমালায় ভ্রমণ করেছেন।

গুয়াতেমালার একটি বিশেষ গল্প রয়েছে।

রোজেনথালের পরিবারের একজন ছিলেন ক্লডিয়া, যিনি গুয়াতেমালার বাসিন্দা ছিলেন এবং তাদের জন্য সেখানকার খাবার তৈরি করতেন।

তাই গুয়াতেমালা নিয়ে অনুষ্ঠান করার সময় রোজেনথাল ক্লডিয়াকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।

এছাড়াও, স্পেনের বাস্ক কান্ট্রির সান সেবাস্টিয়ান শহরটিও তার খুব পছন্দের একটি জায়গা।

নিজের শহর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠান করার অভিজ্ঞতা নিয়ে রোজেনথাল বলেন, ‘আমি নিউইয়র্ক নিয়ে কাজ করতে একটু নার্ভাস ছিলাম। কারণ এই শহরটিকে নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে।’

কিন্তু আমি আমার মতো করে নিউইয়র্ককে উপস্থাপন করতে চেয়েছি।

ভ্রমণের ক্ষেত্রে রোজেনথালের পরামর্শ হলো— কোনো কিছুই আগে থেকে পরিকল্পনা না করা।

তার মতে, অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলোই ভ্রমণের স্মৃতিকে আরও সুন্দর করে তোলে।

তবে, কিছু গবেষণা করা ভালো।

রেস্টুরেন্ট খুঁজে বের করার জন্য তিনি গুগলের সাহায্য নেন।

অনুষ্ঠানে রোজেনথালকে একসঙ্গে অনেক খাবার খেতে দেখা যায়, যা দেখে অনেকের মনে হতে পারে তিনি হয়তো একদিনে এত খাবার খান।

কিন্তু রোজেনথাল জানিয়েছেন, একটি দৃশ্যের শুটিংয়ের জন্য পুরো এক সপ্তাহ ধরে তিনি সেই খাবারগুলো খেয়েছেন।

বর্তমানে রোজেনথাল তার লাইভ শো নিয়ে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করছেন এবং দর্শকদের তার বিশ্ব ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানাচ্ছেন।

তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *