ফিলিিপ রোজেন্থাল (Phil Rosenthal)-এর খাদ্য ও ভ্রমণের অভিজ্ঞতা: সংস্কৃতির মেলবন্ধন
“যদি সবকিছুতে ভয় পেতাম তবে আমিই হতাম অ্যান্থনি বোর্দেইন”- কথাটি বলেছিলেন ফিলিিপ রোজেন্থাল। খাদ্য ও ভ্রমণ বিষয়ক জনপ্রিয় টিভি শো ‘সামবডি ফিড ফিল’-এর (Somebody Feed Phil) নির্মাতা তিনি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর জীবনকে প্রভাবিত করা মানুষ, স্থান এবং খাবারের গল্প বলেছেন।
জার্মান অভিবাসী পরিবারে বেড়ে ওঠা ফিলিিপ, শৈশবে মশলার স্বাদ থেকে ছিলেন অনেক দূরে। তাঁর ভাষায়, “আমার বাবা-মা’র জার্মান ঘরানায় রান্না করা খাবার ছিল সাদামাটা, যেখানে কোনো ঝাল বা মশলার ছিটেফোঁটাও ছিল না।” তাঁর প্রথম রসুনের স্বাদ পাওয়ার অভিজ্ঞতা অনেকটা “দ্য উইজার্ড অফ ওজ” (The Wizard of Oz) সিনেমার মতো, যেখানে ডরোথি দরজা খোলার পর সিনেমার জগৎ রঙিন হয়ে ওঠে।
খাদ্যরসিক ফিলিিপের মতে, যারা ভ্রমণের ধারণা ভালোবাসেন কিন্তু ঘরের বাইরে বের হতেও দ্বিধা বোধ করেন, তাঁদের জন্য এই ধরনের ভ্রমণ বিষয়ক অনুষ্ঠান তৈরি করা যেতে পারে।
ফিলিিপের মতে, প্রতিটি শহরেই চমৎকার খাদ্য সংস্কৃতি বিদ্যমান, কারণ সেখানে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও দেশের মানুষের বসবাস। তিনি জানান, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে সেরা কিছু শ্যাওয়ার্মা (Shawarma) খেয়েছেন, যা একজন সিরীয় ব্যক্তির হাত ধরে সেখানে পৌঁছেছিল।
তাঁর মতে, অভিবাসন এবং সংস্কৃতির মিশ্রণই সবকিছুকে উন্নত করে।
খাবারের স্বাদের ওপর পরিবেশের প্রভাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে ফিলিিপ ইতালির একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, ইতালিতে তাঁর কাছে সবকিছুই সুন্দর লাগে, সেখানকার খাবার সুস্বাদু এবং সবাই সবসময় হাসিখুশি থাকে।
একবার তিনি কর্টিনা (Cortina) নামক একটি স্কিইং টাউনে (skiing town) যান এবং একটি ছোট ক্যাফেতে সেখানকার বিশেষ খাবারটি জানতে চান। উত্তরে তাঁরা জানায়, “পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি পাস্তা” (pasta with onions)।
প্রথমটায় তাঁর মনে হয়েছিল, এই সাধারণ খাবারটি হয়তো বিশেষ কিছু নয়। কিন্তু খেয়ে তাঁর ধারণা পাল্টে যায়। কারণ, দিনের পর দিন ধরে পেঁয়াজ সেদ্ধ করে নরম এবং মিষ্টি করা হয়েছিল, যা ক্রিম ও ভেষজের সঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়েছিল।
তাঁর মতে, ভালো উপকরণ দিয়ে সাধারণ খাবারও অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে।
জাপানের টোকিও শহরে (Tokyo) গিয়ে ফিলিিপ এক রেস্টুরেন্টে (restaurant) পিঁপড়া খেয়েছিলেন, যা ছিল লেবুর মতো! তিনি বলেন, “আমি যখন এটি খাচ্ছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল যেন কেউ আমার জিহ্বায় এক ফোঁটা লেবুর রস দিয়েছে।
আর্ন্তজাতিক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে ফিলিিপ দুবাইয়ের (Dubai) একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। সেখানে এক ফিলিস্তিনি নারীর (Palestinian woman) রেস্টুরেন্টে গিয়ে তিনি এমন খাবার খেয়েছিলেন, যা তাঁকে কাঁদিয়েছিল।
রোজেন্থাল জানান, ওই নারীর মায়ের রেসিপি অনুযায়ী তৈরি করা কাঁচা ভেড়ার মাংসের একটি বিশেষ পদ ছিল, যা তিনি এখনো ভুলতে পারেন না। তাঁদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে এবং তাঁরা এখনো যোগাযোগ রাখেন।
খাবার, সংস্কৃতি এবং ভ্রমণের প্রতি ভালোবাসা থেকে তৈরি হয়েছে ফিলিিপ রোজেন্থালের ‘সামবডি ফিড ফিল’। খুব শীঘ্রই এই অনুষ্ঠানের নতুন সিজন মুক্তি পেতে যাচ্ছে, যেখানে তিনি এমন কিছু স্থানে ভ্রমণ করেছেন, যা আগে কখনো যাননি। যদিও এখনই সেই স্থানগুলোর নাম প্রকাশ করতে চান না তিনি।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক