ফিলাডেলফিয়ার একটি বার থেকে ফেরার পর এক যুগল হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যান। ঘটনাটি ঘটেছিল আজ থেকে প্রায় দুই দশক আগে, কিন্তু এখনো তাদের ভাগ্যের কোনো কিনারা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় হতবাক হয়ে আছে সবাই।
২০০৫ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি, রিচার্ড পেট্রোন জুনিয়র (৩৫) এবং তার বান্ধবী ড্যানিয়েল ইম্বো (৩৪) ফিলাডেলফিয়ার সাউথ স্ট্রিটে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। স্থানীয় “এবিলেন্স” বার থেকে তারা মাঝরাতের কিছু আগে বের হন। এরপর থেকেই তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
তাদের সাথে নিখোঁজ হয় রিচার্ডের ২০০১ সালের কালো রঙের ডজ ডাকোটা ট্রাকটিও।
ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ এবং ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। কিন্তু কোনো সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিভাবে দুজন মানুষ এবং একটি ট্রাক রাতের অন্ধকারে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল, তা আজও এক রহস্য।
তদন্তকারীরা জানান, ঘটনার পরে ঘটনাস্থল থেকে কোনো ফরেনসিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি, ওই এলাকার টোল ক্যামেরাতেও তাদের গাড়ির কোনো ছবি ধরা পড়েনি। তাদের ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টেরও কোনো ব্যবহার হয়নি।
ড্যানিয়েলের ভাই জন ওটোব্রে এখনো এই ঘটনার কথা ভেবে গভীর হতাশায় ভোগেন। তিনি বলেন, “মনে হয় যেন বরফের বিশাল প্রান্তরে আমি একা দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে কোনো পথ নেই, কোনো চিহ্ন নেই।”
রিচার্ডের মা মার্জ পেট্রোনও একই রকম বেদনায় কাতর। তিনি বলেন, “আমার ছেলে কোথায়? তার কি হয়েছে? যারা তাকে নিয়ে গেল, তারা কি করেছে? সে কি কষ্ট পেয়েছিল? আমার নাম ধরে কি সে চিৎকার করেছিল?”
নিখোঁজ হওয়ার পর, দুই পরিবারের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। ঘটনার পর তারা একসঙ্গে অনেক চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তাদের মধ্যে সন্দেহ ও ভুল বোঝাবুঝি বেড়ে যায়।
ওই রাতে, ড্যানিয়েল এবং রিচার্ড সাউথ স্ট্রিটে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন, যা সেখানকার একটি জনপ্রিয় স্থান। তারা সেখানে প্রায় রাত ৯টার দিকে পৌঁছান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রিচার্ড ধূসর রঙের একটি পোলো সোয়েটশার্ট, নীল জিন্স এবং স্নিকার পরেছিলেন। ড্যানিয়েলের পরনে ছিল জিন্স এবং একটি গাঢ় রঙের জ্যাকেট। তার হাতে ছিল কালো রঙের একটি ব্যাগ।
বার থেকে বের হওয়ার পর রিচার্ডের পরিকল্পনা ছিল ড্যানিয়েলকে নিউ জার্সির মাউন্ট লরেলে তার অ্যাপার্টমেন্টে নামিয়ে দিয়ে ফিলাডেলফিয়ার আডমোর-এ নিজের বাসায় ফিরবেন।
ড্যানিয়েলের পরিবার জানায়, পরের দিন তিনি একটি পার্লার অ্যাপয়েন্টমেন্টে যাননি। যা তার স্বভাবের বাইরে ছিল। এরপর তার সন্তানের বাবা যখন তাদের ছেলেকে নিয়ে ড্যানিয়েলের বাসায় যান, তখন তিনি সেখানে ছিলেন না। তখনই তারা উদ্বেগে পরে যান।
তদন্তকারীরা মনে করেন, নিখোঁজ হওয়ার পেছনে তাদের নতুন করে জীবন শুরু করার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। কারণ, তাদের প্রত্যেকেরই ছোট সন্তান ছিল এবং তারা তাদের সন্তানদের ছেড়ে যাওয়ার মতো মানুষ ছিলেন না।
এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট ফিলিপ ব্লেসিংটন এক বিবৃতিতে জানান, “ড্যানিয়েল তার সন্তানের জন্য জীবন দিতেও রাজি ছিলেন।”
রিচার্ড তার মেয়ের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক রাখতেন। তিনি মেয়েকে ব্যান্ড এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতেন। মেয়ের নাম “অ্যাঞ্জেলা” তিনি তার হাতে ট্যাটুও করে রেখেছিলেন।
ড্যানিয়েলের ভাই জন আরও জানান, ড্যানিয়েল রিচার্ডকে অনেক বছর ধরে চিনতেন এবং তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল।
রিচার্ড ছিলেন একজন পেশাদার পাচক। তিনি তার পরিবারের প্যাস্ট্রি ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন।
তদন্তকারীরা বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখছেন। তারা ধারণা করেছিলেন, সম্ভবত এটি মাফিয়াদের কাজ হতে পারে। কিন্তু তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এফবিআইয়ের সাবেক বিশেষ এজেন্ট ভিটো রোসেলি এই মামলার প্রধান তদন্তকারী ছিলেন। তিনি এখনো মনে করেন, এই ঘটনার পেছনে কোনো গভীর রহস্য রয়েছে।
বর্তমানে এফবিআই এই মামলার তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। তারা এখনো আশা করে, কোনো না কোনোভাবে তারা এই ঘটনার সমাধান করতে পারবে। যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত, তাদের ধরিয়ে দিতে পারলে ১৫,০০০ মার্কিন ডলার পুরস্কারের ঘোষণা করা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন