ফোর স্বাদ কেন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভিন্ন হয়, ভিয়েতনামের এই জনপ্রিয় নুডলস সুপের গল্প।
ভিয়েতনামের জনপ্রিয় একটি খাবার হলো ‘ফো’। চালের নুডলস, মাংস এবং নানা ধরনের মশলার মিশ্রণে তৈরি এই সুপটি শুধু ভিয়েতনামের মানুষের কাছেই নয়, সারা বিশ্বে খাদ্যরসিকদের কাছে প্রিয় একটি নাম। কিন্তু এই ‘ফো’-এর স্বাদ কি সবসময় একই থাকে?
স্থানভেদে এর স্বাদে ভিন্নতা আসে, আর সেই ভিন্নতার পেছনে রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস।
আসলে, ফো-এর জন্ম উনিশ শতকের শেষের দিকে, হ্যানয় থেকে প্রায় ৫০ মাইল দূরে নাম দিন প্রদেশে। ফরাসি শ্রমিকদের আগমনের ফলে গরুর মাংসের ব্যবহার বাড়ে, আর স্থানীয়রা গরুর হাড় ও অন্যান্য অংশ দিয়ে সুপ তৈরি করতে শুরু করে, যা কালের বিবর্তনে ‘ফো’-এর রূপ নেয়।
প্রথমে এটি ছিল স্থানীয় শ্রমিকদের খাবার, পরে হ্যানয়ে আসা শ্রমিকদের হাত ধরে এর বিস্তার ঘটে।
হ্যানয়ে বসবাস করা শিল্পী ও খাদ্যরসিকদের মতে, ভালো ফো তৈরি করা একটি চ্যালেঞ্জ। কারণ, তারা খাবারের ব্যাপারে বেশ খুঁতখুঁতে হন।
তবে ভালো ফো হলে সবাই সেটির কদর করে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ডে বসবাসকারী তেয়ে ত্রান ২০১৪ সালে ‘মনস্টার ফো’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট খোলেন। ছোটবেলায় মায়ের হাতের রান্না করা ফো-এর স্বাদ তিনি আজও ভোলেননি।
দক্ষিণ ভিয়েতনামের এই ফো-তে স্বাদ যুক্ত করতে তিনি মায়ের রেসিপি অনুসরণ করেন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর অনেকে দেশ ছেড়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসতি স্থাপন করে। তাদের সঙ্গে ফো-এর রেসিপিও ছড়িয়ে পরে।
বিভিন্ন অঞ্চলে, সেখানকার মানুষের রুচি ও উপাদানের ভিন্নতার কারণে ফো-এর স্বাদে পরিবর্তন আসে।
যেমন, উত্তর ভিয়েতনামের ফো-তে ঝোল হালকা ও পরিষ্কার থাকে, মশলার ব্যবহারও কম হয়। অন্যদিকে, দক্ষিণ ভিয়েতনামের ফো-তে ঝোল একটু মিষ্টি ও ঘন হয়।
সেখানে বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ভেষজ উপাদান ব্যবহার করা হয়।
চেক রিপাবলিকের প্রাগে বসবাসকারী ভিয়েতনামের নাগরিক ত্রিন থুই দুং-এর মতে, নব্বইয়ের দশকে সেখানে ভালো মানের ভিয়েতনামি খাবার পাওয়া যেত না। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলায় এবং ফো-এর জনপ্রিয়তা বাড়ে।
বর্তমানে প্রাগে অনেক ফো রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে স্থানীয়রা এই সুপের স্বাদ উপভোগ করেন।
ফো তৈরির প্রক্রিয়াতেও রয়েছে ভিন্নতা। হ্যানয় এবং অকল্যান্ডের রেস্টুরেন্টগুলোতে গরুর হাড় থেকে ঝোল তৈরি করা হয়, তবে মশলার পরিমাণে পার্থক্য থাকে।
কেউ হালকা মশলা ব্যবহার করেন, আবার কেউ তাদের মায়ের রেসিপি অনুযায়ী ঝোলে মশলা যোগ করেন।
পরিবেশনের সময় নুডলস, মাংস ও অন্যান্য উপকরণ যোগ করা হয়।
ফো-এর সঙ্গে পরিবেশিত উপকরণেও ভিন্নতা দেখা যায়। দক্ষিণ ভিয়েতনামের রেস্টুরেন্টগুলোতে সাধারণত সতেজ সবজি ও সস ব্যবহার করা হয়, যেখানে উত্তর ভিয়েতনামের ফো-এর সঙ্গে থাকে আদা, মরিচ এবং লেবুর মতো উপাদান।
ভিয়েতনামের বিভিন্ন অঞ্চলে ফো-এর স্বাদ ভিন্ন হলেও, খাবারটি খাওয়ার সময় সবাই যেন একাত্ম হয়ে যায়। এই খাবারটি শুধু একটি সুপ নয়, বরং এটি একটি সংস্কৃতির অংশ।
বর্তমানে, সারা বিশ্বে ফো-এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। হানোইয়ের ‘ফো থিন’, ‘ফো গিয়া ত্রুয়েন বাত দান’, এবং ‘ফো ফুওং’-এর মতো জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টগুলোতে এখনো ঐতিহ্যবাহী স্বাদের ফো পরিবেশন করা হয়।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।