স্মৃতিকে কি গ্রাস করছে ছবির ভিড়?
স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের যুগে ছবি তোলার প্রবণতা বেড়েছে বহুগুণ। এখন যেনো জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করার এক অদম্য ইচ্ছা। জন্মদিন থেকে শুরু করে সাধারণ দিনের নানা ঘটনা—সব কিছুই ছবি বা ভিডিও আকারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
কিন্তু অতিরিক্ত ছবি তোলার এই সংস্কৃতি কি আমাদের স্মৃতিশক্তির ওপর কোনো প্রভাব ফেলছে? সম্প্রতি এই বিষয়ে আলোকপাত করেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।
বর্তমানে বিশ্বে ছবি তোলার পরিমাণ এতটাই বেড়েছে যে, তা আমাদের স্মৃতিকে নতুন করে প্রভাবিত করছে। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, অতিরিক্ত ছবি তোলার কারণে স্মৃতি তৈরি এবং তা মনে রাখার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসছে। জার্মানির ইউনিভার্সিটি অফ ভ্যুর্জবার্গের মনোবিজ্ঞানী ড. ফ্যাবিয়ান হাটমেকার এই বিষয়ে গবেষণা করছেন।
তাঁর মতে, মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি তথ্য সংরক্ষণ করছে, কিন্তু এর ফলে স্মৃতিগুলো কীভাবে প্রভাবিত হচ্ছে, সেই বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
ছোটবেলার ছবি দেখলে অনেকেরই মনে হয় যেন কিছু একটা Missing। ছবির সঙ্গে বাস্তবতার একটা অস্পষ্টতা কাজ করে।
ল্যাভানিয়া ওলুবান নামের একজন নারীর ছেলে আরলো’র উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বুঝিয়েছিলেন। আরলো’র জন্মদিনের অসংখ্য ছবি রয়েছে, যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নজন তুলেছেন।
ল্যাভানিয়া যখন ছোট ছিলেন, তখন হাতে গোনা কয়েকটি ছবি ছিল তাঁর। ড. হাটমেকারের মতে, ছবিগুলো স্মৃতিকে ধরে রাখতে সাহায্য করে, কিন্তু অতিরিক্ত ছবি তোলার কারণে অনেক সময় ঘটনার গভীরে যাওয়া বা সেটিকে অনুভব করার সুযোগ কমে যায়।
তবে ছবি যে স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের জীবনের গল্প তৈরিতে ছবিগুলো সহায়ক।
বিশেষ করে, কোনো ঘটনা মনে করতে বা কোনো অনুভূতিকে নতুন করে অনুভব করতে ছবিগুলো সাহায্য করে। কেউ যখন কোনো ছবি তোলে, তখন সেই ছবি ভবিষ্যতের জন্য একটা টাইম ক্যাপসুল-এর মতো কাজ করে।
কিন্তু অতিরিক্ত ছবি তোলার কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। আমেরিকার মিসিসিপি স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক জুলিয়া সোয়ারেসের মতে, ছবি তোলার কারণে আমরা কিছু বিষয় মনে রাখতে পারলেও, অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় ছবি আমাদের স্মৃতিতে জট তৈরি করে।
তিনি মনে করেন, ছবিগুলো আমাদের স্মৃতিকে নতুনভাবে তৈরি করে, যা আমরা মনে রাখতে চাই, সেই অনুযায়ী সাজানো হয়।
তাহলে, ছবি তোলার সঠিক উপায় কী? এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
- প্রথমত, ছবি তোলার আগে সেই মুহূর্তটিকে অনুভব করতে হবে।
- দ্বিতীয়ত, সব ছবি সংরক্ষণ না করে, গুরুত্বপূর্ণ ছবিগুলো বেছে নিতে হবে এবং নিয়মিতভাবে সেগুলো দেখতে হবে।
ছবিগুলো পর্যালোচনা করলে স্মৃতি আরও ভালোভাবে তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশেও স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে ছবি তোলার প্রবণতা।
বিয়ে, জন্মদিন বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছবি তোলার সংস্কৃতি এখন খুবই সাধারণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি শেয়ার করার মাধ্যমে মানুষ তাদের স্মৃতিগুলো অন্যদের সাথে ভাগ করে নেয়।
তাই ছবি তোলার ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, যাতে আমরা স্মৃতিগুলো সঠিকভাবে ধরে রাখতে পারি।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক