পাইলটেস: নিজেকে ভালোবাসতে পারবেন?

ফিটনেসের জগতে, শরীরচর্চা এবং সুস্থ থাকার ধারণাগুলো সময়ের সাথে সাথে অনেক বদলেছে। নতুন নতুন পদ্ধতির আবির্ভাব ঘটছে, আর এদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ‘পাইল’টিস’। এই ব্যায়াম পদ্ধতি একদিকে যেমন শারীরিক সক্ষমতা বাড়ায়, তেমনই মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও সাহায্য করে।

সম্প্রতি, পাইল’টিস নিয়ে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে, বিশেষ করে রিফর্মার পাইল’টিস-এর জনপ্রিয়তা চোখে পড়ার মতো। তবে, এই ব্যায়ামের ক্রমবর্ধমান চাহিদার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকেই যায় – শরীরচর্চার এই নতুন ধারা কি সত্যিই আমাদের নিজেদের শরীরকে ভালোবাসতে শেখায়?

পাইল’টিস-এর ইতিহাস বেশ পুরোনো। ১৯২০-এর দশকে জোসেফ পাইল’টিস নামের এক ব্যক্তি এই পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন। শুরুতে, আহত সৈনিকদের পুনর্বাসনের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছিল। ধীরে ধীরে, এটি নাচের জগতে প্রবেশ করে এবং পরবর্তীতে সাধারণ মানুষের কাছেও জনপ্রিয়তা লাভ করে।

পাইল’টিস মূলত শরীরের core strength, নমনীয়তা ও ভারসাম্য বাড়াতে সাহায্য করে। এটি মানসিক চাপ কমাতে, উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা দূর করতেও সহায়ক। বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্যেও এই ব্যায়াম উপকারী, যা বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ধীর করতে সাহায্য করে।

কিন্তু বর্তমান সময়ে, পাইল’টিস-এর জনপ্রিয়তা যেন একটু অন্যরকম মোড় নিয়েছে। অনেকে একে দ্রুত ওজন কমানোর একটি উপায় হিসেবে দেখছেন। সমাজের সৌন্দর্য্য-সংক্রান্ত ধারণা এবং শরীরের আদর্শ নিয়ে বিদ্যমান কিছু চাপও এক্ষেত্রে কাজ করে। বিশেষ করে, রিফর্মার পাইল’টিস-এর ক্রমবর্ধমান চাহিদা, যা একটি বিশেষ যন্ত্রের (reformer machine) মাধ্যমে করা হয়, অনেকের মনে এই ধারণা আরও জোরালো করে তোলে।

এই প্রসঙ্গে, ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটির ক্রীড়া সমাজবিজ্ঞানী ফে লিন্ডা ওয়াচস-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, পাইল’টিস-এর সঙ্গে প্রায়শই একটি নির্দিষ্ট শারীরিক গড়নের ধারণা জড়িত থাকে – ‘লম্বা ও পেশীবহুল শরীর’। যদিও সব ধরনের শরীরের মানুষ এখানে ব্যায়াম করতে পারে, তবুও এই ধারণাটি অনেক সময় শ্বেতাঙ্গ নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এর সঙ্গে সামাজিক শ্রেণির একটি যোগসূত্রও বিদ্যমান।

বাংলাদেশেও কি এই ধরনের প্রবণতা দেখা যায়? আমাদের সমাজে শারীরিক সৌন্দর্যের ধারণা কি একই রকম চাপ তৈরি করে? এই প্রশ্নগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশেও, সমাজের বিভিন্ন স্তরে শরীরের গঠন নিয়ে ভিন্ন ধরনের প্রত্যাশা বিদ্যমান।

মিডিয়া, সামাজিক মাধ্যম এবং ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির প্রভাবে, একটি নির্দিষ্ট শারীরিক গড়নকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরা হয়। এর ফলে, অনেক নারী-পুরুষের মধ্যে নিজেদের শরীর নিয়ে অসন্তুষ্টি দেখা যায়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

পাইল’টিস-এর উপকারিতা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তবে, ব্যায়ামের পাশাপাশি, আমাদের নিজেদের শরীরের প্রতি ইতিবাচক ধারণা তৈরি করাটাও জরুরি। শরীরচর্চা শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যেই নয়, বরং মানসিক শান্তির জন্যও অপরিহার্য।

তাই, আসুন, আমরা শরীরচর্চাকে একটি আনন্দের বিষয় হিসেবে দেখি, যা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরের গঠন যেমনই হোক না কেন, তাকে ভালোবাসতে এবং সম্মান করতে শিখি।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *