যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে ঘটে যাওয়া একটি বিমান দুর্ঘটনায় পাইলটের শারীরিক অক্ষমতার কারণে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারালেন এক মা ও তার শিশু সন্তানসহ চারজন। জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা বোর্ড (এনটিএসবি)-এর তদন্ত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
২০২৩ সালের জুনে ঘটে যাওয়া এই বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন ৪৯ বছর বয়সী আদিনা আজারিয়ান, তাঁর ২ বছর বয়সী মেয়ে আরিয়া, ৫৬ বছর বয়সী আয়ার সাহায্যকারী (নানী) ইভাডনি স্মিথ এবং ৬৯ বছর বয়সী পাইলট জেফ হেফনার।
তদন্তে জানা গেছে, সম্ভবত বিমানের অভ্যন্তরের বায়ুচাপ কমে যাওয়ার কারণে পাইলট কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এর ফলে অক্সিজেনের অভাবে (হাইপক্সিয়া) তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং একপর্যায়ে তিনি সংজ্ঞা হারান। এই ঘটনার পেছনে বিমানের কারিগরি ত্রুটি এবং অতিরিক্ত অক্সিজেন সরবরাহ করার ব্যবস্থা না থাকাকেও দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এনটিএসবি’র মতে, বিমানের আরোহীরা সম্ভবত অক্সিজেনের অভাবে অচেতন হয়ে পড়েন।
বিমানের ব্ল্যাকবক্স বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুর্ঘটনার আগে পাইলট স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ১৫ মিনিটের দিকে টেনেসি অঙ্গরাজ্যের এলিজাবেটটন বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করেন। এরপর প্রায় ১৫ মিনিট পর তিনি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। ধারণা করা হচ্ছে, পাইলট সম্ভবত বিমানটি একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সময়ই নিয়ন্ত্রণ হারান। এরপর বিমানটি অটো-পাইলট সিস্টেমে চলতে থাকে।
বিমানটি প্রায় ৩৪ হাজার ফুট উচ্চতায় পৌঁছানোর পর তার গন্তব্য লং আইল্যান্ডকে অতিক্রম করে আরও উত্তরে চলে যায় এবং পরে আবার ফিরে আসে। দুর্ঘটনার কিছু সময় আগে, যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর পাইলটরা বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তাঁরা জানান, বিমানের পাইলট সিটের ওপর অচেতন অবস্থায় ঝুঁকে ছিলেন এবং অন্য যাত্রীদের মধ্যে কোনো নড়াচড়া দেখা যায়নি। এরপর বিকেল ৩টা ২২ মিনিটে বিমানটি দ্রুতগতিতে নিচে নামতে শুরু করে এবং ভার্জিনিয়ার একটি জঙ্গলে বিধ্বস্ত হয়।
তদন্তে আরও জানা গেছে, দুর্ঘটনার আগে বিমানের রক্ষণাবেক্ষণে কিছু সমস্যা ছিল। এর মধ্যে বায়ুচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশগত সুরক্ষা সম্পর্কিত কয়েকটি ত্রুটি ছিল, সেইসঙ্গে পাইলটের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন মাস্কও পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার আগে এই সমস্যাগুলো মেরামত করা হয়েছিল কিনা, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া, পাইলটের উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মতো শারীরিক সমস্যা ছিল এবং তিনি কিছু ওষুধ সেবন করতেন। তবে তদন্তকারীরা বলছেন, দুর্ঘটনার সময় তাঁর ওষুধ সেবনের কারণে কর্মক্ষমতা হ্রাসের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এই দুর্ঘটনার পর এনটিএসবি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্ভবত বিমানের সব আরোহী বায়ুচাপ হ্রাসের মতো একটি সাধারণ পরিবেশগত কারণে কর্মক্ষমতা হারিয়েছিলেন। এই ঘটনা আবারও বিমানযাত্রার নিরাপত্তা এবং কারিগরি ত্রুটিগুলো সময়মতো মেরামতের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
তথ্য সূত্র: পিপল