ধানখেতে ‘পিঙ্ক ম্যান’: বিস্মিত করা এক ছবি!

শিরোনাম: থাইল্যান্ডের ‘পিঙ্ক ম্যান’: ভোগবাদিতার এক শিল্পীসূলভ সমালোচনা, যা বাংলাদেশের জন্যও প্রাসঙ্গিক?

বর্তমান বিশ্বে, উন্নয়নের নামে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে অনেক দেশের সমাজ কাঠামো। এর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো মানুষের মধ্যে ভোগবাদী মানসিকতার বিস্তার। থাইল্যান্ডের প্রখ্যাত শিল্পী মানিত শ্রীওয়ানিচপুমের ‘পিঙ্ক ম্যান’ শীর্ষক আলোকচিত্র সিরিজটি এই পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটেই তৈরি হয়েছে।

শিল্পী তাঁর কাজের মাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন সমাজের এই নতুন প্রবণতা নিয়ে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্যও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

মানিত শ্রীওয়ানিচপুমের জন্ম ১৯৬১ সালে, ব্যাংককে। তিনি তাঁর শিল্পকর্মের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি ফুটিয়ে তোলেন। তাঁর বিখ্যাত ‘পিঙ্ক ম্যান’ সিরিজের প্রধান চরিত্রটি হলেন এক ব্যক্তি, যিনি উজ্জ্বল গোলাপি রঙের পোশাক পরে একটি গোলাপি ট্রলি ঠেলছেন।

এই সিরিজের মাধ্যমে শিল্পী থাইল্যান্ডে দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজের চিত্র তুলে ধরেছেন, যেখানে ভোগবাদিতা এবং পর্যটন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে।

আশির দশকে থাইল্যান্ডে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। তখন সরকার পর্যটনকে উৎসাহিত করতে ‘অ্যামেজিং থাইল্যান্ড’ নামে একটি প্রচারণা শুরু করে।

এই সময়টাতে, শিল্পী সমাজের এই পরিবর্তনের ধারাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি অনুভব করেন, মানুষ যেন অর্থের পেছনে ছুটছে এবং তাদের মধ্যে আত্ম-কেন্দ্রিকতা বাড়ছে।

তাঁর মতে, এই পরিবর্তনগুলো ঐতিহ্যবাহী থাই সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল, যেখানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব ছিল গভীর। বৌদ্ধ ধর্মানুসারে, মানুষের জীবন ধারণের মূল ভিত্তি হলো ত্যাগ ও বিনয়।

শ্রীওয়ানিচপুমের ‘পিঙ্ক ম্যান’ যেন এই ভোগবাদী সমাজের প্রতিচ্ছবি। ট্রলিতে থাকা খালি স্থানটি মানুষের অতৃপ্ত বাসনার প্রতীক, যা সবসময় আরও বেশি কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে।

এই সিরিজের জন্য শিল্পী প্রথমে ব্যাংককের আর্থিক কেন্দ্র, সিলমে, একজন শিল্পী ও কবি সোমপং থাভিকে নিয়ে একটি খালি গোলাপি ট্রলি ঠেলে ছবি তোলেন। এরপর তিনি চিয়াং মাইয়ের একটি উৎসবে ‘পিঙ্ক ম্যান’-কে নিয়ে যান।

সেখানে পর্যটকদের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়। অনেকে ভেবেছিলেন, লোকটি হয়তো কিছু বিক্রি করতে এসেছেন।

ধীরে ধীরে ‘পিঙ্ক ম্যান’ থাইল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেছেন, যা পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভোগবাদের বিস্তারকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।

দীর্ঘদিন ধরে ‘পিঙ্ক ম্যান’ চরিত্রের মাধ্যমে কাজ করার পর, শিল্পী অনুভব করেন, এই চরিত্রের একটি সমাপ্তি প্রয়োজন।

২০১৮ সালে তিনি নিউইয়র্কের একটি গ্যালারিতে এই সিরিজের শেষ ছবি তোলেন, যেখানে পিঙ্ক ম্যানের পাশে ছিল গোলাপী রঙের বডি ব্যাগ।

এর মাধ্যমে তিনি ভোগবাদের সমাপ্তি এবং এর প্রভাব সম্পর্কে একটি বার্তা দিতে চেয়েছেন।

মানিত শ্রীওয়ানিচপুমের ‘পিঙ্ক ম্যান’ সিরিজটি কেবল থাইল্যান্ডের প্রেক্ষাপটেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিশ্বজুড়ে চলমান ভোগবাদী সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী সমালোচনা।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে দ্রুত নগরায়ন ও প্রযুক্তির প্রসার ঘটছে, সেখানে এই শিল্পকর্ম বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। এটি আমাদের সমাজের পরিবর্তনগুলো গভীরভাবে উপলব্ধি করতে এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি সচেতন পথ বেছে নিতে সাহায্য করে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *