নারীদের পোশাকের উপর অতিরিক্ত শুল্ক: যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতিতে লিঙ্গ বৈষম্য?
যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের বাজারে নারীদের জন্য এক ধরনের ‘গোলাপি শুল্ক’ বিদ্যমান। এই শুল্কের কারণে পুরুষদের তুলনায় নারীদের পোশাকের দাম বেশি হয়। কয়েক দশক ধরে চলে আসা এই নীতির কারণে নারীরা প্রতি বছর অতিরিক্ত প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার খরচ করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের শুল্ক ব্যবস্থা বাণিজ্য নীতির একটি পুরোনো দুর্বলতা, যা এখনো বিদ্যমান।
আমেরিকার শুল্ক নীতিতে পোশাকের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। নারীদের পোশাকের উপর শুল্কের হার পুরুষদের পোশাকের তুলনায় গড়ে প্রায় ৩ শতাংশ বেশি।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালে নারীদের পোশাকের গড় শুল্ক ছিল ১৬.৭ শতাংশ, যেখানে পুরুষদের পোশাকের জন্য এই হার ছিল ১৩.৬ শতাংশ। এমনকি, কিছু নির্দিষ্ট পোশাকে এই বৈষম্য আরও বেশি।
যেমন, ২০১৭ সালে নারীদের তৈরি পোশাকের উপর ১৫.১ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছিল, যেখানে পুরুষদের জন্য এই হার ছিল ১৩.৩ শতাংশ। অন্তর্বাসের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়।
নারীদের অন্তর্বাসে ১২.৮ শতাংশ শুল্ক ছিল, যেখানে পুরুষদের জন্য এই হার ছিল মাত্র ৮.৬ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বৈষম্যের মূল কারণ অনুসন্ধানে গেলে দেখা যায়, অতীতে যখন এই শুল্ক নীতি তৈরি করা হয়েছিল, তখন পুরুষদের পোশাক শিল্প ছিল অনেক বেশি প্রভাবশালী।
সেই সময়ে পুরুষদের পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ফলে, পুরুষদের পোশাকের উপর শুল্ক কমানোর জন্য তদবির করা হত, যা নারীদের পোশাকের ক্ষেত্রে গুরুত্ব পেত না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছেন, যার ফলে এই বৈষম্য আরও বাড়তে পারে।
যদিও কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, ট্রাম্পের নেওয়া শুল্ক নীতির কারণে নারী-পুরুষের শুল্কের ব্যবধান কমে আসতে পারে, কারণ এতে পুরুষদের পোশাকের শুল্কও বাড়বে। তবে, নারীরা যেহেতু পোশাকের জন্য বেশি অর্থ খরচ করেন, তাই এই শুল্ক বৃদ্ধি তাদের উপর বেশি প্রভাব ফেলবে।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নারীদের পোশাকের গড় খরচ পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি।
২০২৩ সালের হিসাবে, একজন নারী পোশাকের জন্য গড়ে ৬৫৫ ডলার খরচ করেছেন, যেখানে একজন পুরুষের খরচ ছিল ৪০৬ ডলার।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, এই শুল্কের কারণে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, তারা তাদের আয়ের একটি বড় অংশ মৌলিক পোশাক এবং প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য ব্যয় করে।
এই শুল্ক ব্যবস্থা মূলত সস্তা ও গণ-উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ায়, যা নিম্ন আয়ের মানুষের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
উদাহরণস্বরূপ, মোজা, আন্ডারওয়্যার, টি-শার্ট এবং স্নিকারের মতো মৌলিক পোশাকের উপর শুল্কের হার বিলাসবহুল পোশাকের চেয়ে বেশি থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য নীতি নিয়ে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে, এই বিষয়টি নিয়ে দেশটির আইনপ্রণেতাদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।
তারা এই ধরনের শুল্কের প্রভাব খতিয়ে দেখতে চান।
তথ্য সূত্র: সিএনএন