বিশ্বজুড়ে পিৎজা প্রেমীদের কাছে ‘পিৎজা হাট’ একটি সুপরিচিত নাম। এই খাদ্য প্রস্তুতকারক সংস্থাটি কীভাবে যাত্রা শুরু করেছিল, কিভাবেই বা বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা লাভ করল, আসুন সেই গল্পটি শোনা যাক।
১৯৫৮ সালের ৩১ মে, আমেরিকার কানসাস অঙ্গরাজ্যের উইচিটা শহরে, দুই ভাই – ফ্রাঙ্ক ও ড্যান কার্নি-এর হাত ধরে জন্ম হয় পিৎজা হাট-এর। মাত্র ৬০০ মার্কিন ডলার ধার করে তাঁরা এই ব্যবসার সূচনা করেন। বর্তমানে, পিৎজা হাট বিশ্বজুড়ে অন্যতম জনপ্রিয় একটি ফাস্ট ফুড চেইন। বর্তমানে, একশটির বেশি দেশে এর ১৯,০০০-এর বেশি শাখা রয়েছে।
শুরুর দিকে, কার্নি ভাইদের দোকানের নামের জন্য একটি বিশেষত্ব ছিল। তাঁদের দোকানের সাইনবোর্ডে আটটির বেশি অক্ষর লেখার জায়গা ছিল না। তাই, ‘পিৎজা হাট’ নামটি বেছে নিতে হয়েছিল। পরবর্তীতে, ১৯৬০-এর দশকে, ‘পিৎজা পিট’ নামের একটি মাসকট তৈরি করা হয়েছিল, যা বিপণন সামগ্রীতে ব্যবহৃত হত। এই সময়ে, বিখ্যাত স্থপতি রিচার্ড ডি বার্ক-এর ডিজাইন করা লাল রঙের ছাদ পিৎজা হাট-এর অন্যতম পরিচিত প্রতীক হয়ে ওঠে। যদিও এখন সব দোকানে এই লাল ছাদ দেখা যায় না, তবুও তাদের লোগোতে এর উপস্থিতি বিদ্যমান।
পিৎজা হাটের মেন্যুতে অন্যতম জনপ্রিয় একটি পদ ছিল ‘ডিপ ডিশ স্প্যাগেটি’। ১৯৭০-এর দশকে, এটির দাম ছিল খুবই কম, মাত্র ১.৯৯ ডলার। ১৯৭৭ সালে, পেপসিকো তাদের সাথে চুক্তি করে, যা পিৎজা হাট-এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।
নব্বইয়ের দশকে, পিৎজা হাট ‘কিডস নাইট’ চালু করে, যেখানে শিশুরা বিনামূল্যে পিৎজা পেত। পরবর্তীতে, ১৯৯৫ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর স্ত্রী ইভানা ট্রাম্পকে নিয়ে একটি বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়েছিলেন, যেখানে প্রথম ‘স্টাফড-ক্রাস্ট’ পিৎজা-এর ঘোষণা করা হয়।
পিৎজা হাট সব সময়ই গ্রাহকদের নতুন কিছু উপহার দিতে চেয়েছে। ২০০১ সালে, তারা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে প্রথম পিৎজা সরবরাহ করে ইতিহাস গড়েছিল। ২০০৩ সালে, চিকেন উইংস-এর চাহিদা মেটাতে তারা ‘উইংস্ট্রিট’ চালু করে। ২০১৬ সালে, তানজানিয়ায় তাদের প্রথম শাখা খোলার পরে, তারা কিলিমাঞ্জারো পর্বতের চূড়ায় পিৎজা সরবরাহ করে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিল।
পিৎজা হাট বিভিন্ন সময়ে তাদের স্লোগান পরিবর্তন করেছে, যেমন – ‘মেকিন’ ইট গ্রেট’, ‘নাও ইউ’র ইটিং’। ২০১৬ সালে তারা ‘নো ওয়ান আউটপিৎজাস দ্য হাট’ স্লোগানটি ব্যবহার করা শুরু করে।
বিপণন কৌশল হিসেবে পিৎজা হাট বিভিন্ন সিনেমা স্পনসর করেছে। ১৯৮৯ সালে ‘ব্যাক টু দ্য ফিউচার পার্ট ২’ সিনেমায় তাদের স্পনসরশিপ ছিল। এমনকি, ১৯৯২ সালে তারা অতিরিক্ত খাদ্য বিতরণের জন্য একটি জাতীয় কর্মসূচি শুরু করে, যার মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ২২ লক্ষ কেজি খাদ্য বিতরণ করা হয়।
২০১৮ সালে, আমেরিকান ফুটবল লীগ (NFL)-এর সাথে তারা চুক্তিবদ্ধ হয়। ২০২১ সালে, ইউটিউব তারকা ‘এয়ারর্যাক’-এর সাথে মিলে পিৎজা হাট প্রায় ১,৩০০ বর্গমিটারের একটি বিশাল পিৎজা তৈরি করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছিল।
পিৎজা হাটের প্রথম দোকানটি বর্তমানে একটি জাদুঘরে পরিণত হয়েছে, যেখানে পুরনো দিনের স্মৃতিচিহ্ন আজও দেখা যায়। ২০১৬ সালের সুপার বোলে, তারা বিশেষ সোনালী বাক্সে সজ্জিত, ভোজযোগ্য ২৪-ক্যারেট সোনা দিয়ে তৈরি ৫০টি পিৎজা বিতরণ করেছিল।
বাংলাদেশেও পিৎজা হাটের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বিভিন্ন উৎসবে ও অনুষ্ঠানে, বন্ধুদের সাথে আড্ডায় অথবা পরিবারের সাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তে পিৎজা এখন একটি অপরিহার্য খাদ্য উপাদান।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার