প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারের উপর বিধি-নিষেধ: পরিবেশের জন্য কতটা কার্যকরী?
বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ দূষণ একটি গুরুতর সমস্যা, যার মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হলো প্লাস্টিক বর্জ্য। প্লাস্টিক সহজে পরিবেশে মিশে না এবং এটি সমুদ্র ও স্থলভাগের জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে।
সম্প্রতি, একটি নতুন গবেষণায় প্লাস্টিকের শপিং ব্যাগ ব্যবহারের উপর বিভিন্ন নীতিমালার কার্যকারিতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাপত্রটি বিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল *সায়েন্স*-এ প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ করা বা এর উপর অতিরিক্ত ফি আরোপ করার মতো পদক্ষেপগুলি উপকূলীয় অঞ্চলে প্লাস্টিক ব্যাগের দূষণ কমাতে উল্লেখযোগ্যভাবে সাহায্য করে। এই ধরনের নীতিমালার কারণে, উপকূল পরিষ্কার অভিযানে প্লাস্টিকের ব্যাগের উপস্থিতি ২৫% থেকে ৪৭% পর্যন্ত হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন পরিবেশ অর্থনীতিবিদ ড. আনা পাপ এবং তাঁর সহকর্মীরা। তাঁরা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৮০টি স্থানীয় প্রোগ্রামের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন।
এই প্রোগ্রামগুলির মধ্যে ছিল প্লাস্টিকের ব্যাগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, ব্যাগের জন্য ফি নির্ধারণ করা, অথবা আংশিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা। এই বিশ্লেষণের জন্য, প্রায় ৪৫,০০০ উপকূল পরিষ্কার অভিযানের তথ্যও ব্যবহার করা হয়েছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, প্লাস্টিক দূষণ শুধু পরিবেশের সৌন্দর্যহানিই ঘটায় না, বরং এটি জলজ প্রাণীদের জন্যও অত্যন্ত ক্ষতিকর। প্লাস্টিকের ব্যাগ, বিশেষ করে সামুদ্রিক প্রাণীদের খাদ্যনালীতে আটকে তাদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
এছাড়াও, প্লাস্টিক ব্যাগগুলি কচ্ছপ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর আবাসস্থলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
গবেষনার প্রধান লেখক ড. পাপ বলেছেন, “প্লাস্টিক দূষণ একটি ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক সমস্যা। যদিও প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের উপর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তবে সামগ্রিকভাবে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার এখনো বাড়ছে।”
গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, কিছু নীতি অন্যদের চেয়ে বেশি কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ, প্লাস্টিকের ব্যাগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপগুলি আংশিক নিষেধাজ্ঞার চেয়ে বেশি ফলপ্রসূ হয়েছে।
এছাড়া, ব্যাগের জন্য ফি নির্ধারণের ফলে, সেই অর্থ ব্যবহার করে উপকূল পরিষ্কারের মতো কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে।
তবে, গবেষকরা এ বিষয়ে একমত যে, শুধুমাত্র প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। প্লাস্টিক ব্যাগ তৈরি ও সরবরাহ করার ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ আনা প্রয়োজন।
এই গবেষণার ফলস্বরূপ, প্লাস্টিক দূষণ কমাতে ব্যক্তি পর্যায়েও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করা হলে, সেটি যত্রতত্র না ফেলে, পুনর্ব্যবহারযোগ্য স্থানে জমা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে, পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া উচিত।
সুতরাং, প্লাস্টিক দূষণ রোধে সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। এই গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য, প্লাস্টিক দূষণ কমাতে সঠিক পদক্ষেপ নিতে সহায়ক হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন