প্লাস্টিকের থালা-বাসন : পরিবেশের জন্য এক নীরব ঘাতক
বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ দূষণ একটি গুরুতর সমস্যা। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি কারণ হল প্লাস্টিকের ব্যবহার।
দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত নানান জিনিসের মধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের থালা-বাসন পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষ করে ফাস্ট ফুডের দোকানগুলোতে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত এই ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রী পরিবেশের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে।
প্লাস্টিক তৈরি হয় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে, যা পোড়ালে কার্বন ডাই অক্সাইড ও মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। এই গ্যাসগুলো পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের একটি প্রধান কারণ।
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের থালা-বাসন সাধারণত পলিস্টাইরিন নামক শক্ত প্লাস্টিক থেকে তৈরি হয়, যা পেট্রোলিয়ামের উপজাত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি বছর বিশ্বে কয়েক বিলিয়ন প্লাস্টিকের চামচ, কাঁটা চামচ ও অন্যান্য সামগ্রী তৈরি হয়। এর খুব সামান্য অংশই পুনর্ব্যবহার করা হয়।
ফলে, বেশিরভাগ প্লাস্টিক বর্জ্য হয়তো ডাস্টবিনে জমা হয়, না হয়তো সেগুলো ফেলা হয় নদীতে। এই প্লাস্টিকগুলো সহজে নষ্ট হয় না।
ফলে এগুলো বছরের পর বছর ধরে পরিবেশে মিশে থাকে এবং পরিবেশের ক্ষতি করে।
প্লাস্টিকের এই ক্রমবর্ধমান ব্যবহার কমাতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এর জন্য ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু সহজ কাজ করা যেতে পারে।
যেমন, বাইরে খাবার খাওয়ার সময় নিজের থালা-বাসন সঙ্গে রাখা। প্লাস্টিকের বদলে বাঁশ বা ধাতুর তৈরি চামচ ব্যবহার করা যেতে পারে।
শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করলেই হবে না, প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন।
বিভিন্ন শহরে এবং গ্রামে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্রকল্প চালু করা যেতে পারে। জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রচার চালানো যেতে পারে।
প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে সৃষ্ট দূষণ শুধু পরিবেশের জন্যই ক্ষতিকর নয়, এটি মানব স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক হুমকি।
প্লাস্টিক ভাঙতে ভাঙতে ক্ষুদ্র কণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়, যা মাটি, পানি ও খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
এই মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলো ক্যান্সার, হরমোন-সংক্রান্ত সমস্যা এবং প্রজনন ক্ষমতা হ্রাসসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
সুতরাং, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশ রক্ষার জন্য আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। ব্যক্তিগত অভ্যাস পরিবর্তনের পাশাপাশি, সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্লাস্টিক দূষণ রোধ করা সম্ভব।
তথ্যসূত্র: সিএনএন