বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিক দূষণ একটি উদ্বেগের কারণ, এবং সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা সেই বিষয়ে নতুন তথ্য দিয়েছে।
২০২২ সালে উৎপাদিত প্রায় ৪০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিকের মধ্যে মাত্র ৯.৫ শতাংশ তৈরি হয়েছে পুনর্ব্যবহৃত উপাদান থেকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই বিশাল পরিমাণ প্লাস্টিকের সিংহভাগ, প্রায় ৯৮ শতাংশ, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তৈরি করা হয়েছে, যার মধ্যে কয়লা এবং তেলের আধিক্য রয়েছে।
প্লাস্টিকের উৎপাদন দ্রুত হারে বাড়ছে।
১৯৫০ সালে যেখানে মাত্র ২ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক তৈরি হতো, সেখানে ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০০ মিলিয়ন টনে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ এই উৎপাদনের পরিমাণ বছরে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন টনে পৌঁছাতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্লাস্টিক দূষণ এখন একটি মারাত্মক বৈশ্বিক সমস্যা, যা পরিবেশ, অর্থনীতি এবং জনস্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পুনর্ব্যবহারের পরিবর্তে পোড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে।
যেখানে ২০২২ সালে মাত্র ২৭.৯ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে।
প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রধান গন্তব্য এখনও ল্যান্ডফিল বা ডাস্টবিন, যা প্রায় ৪০ শতাংশ।
প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
চীন প্লাস্টিকের বৃহত্তম উৎপাদক এবং ব্যবহারকারী হলেও, মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহারের দিক থেকে সবার উপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
একজন মার্কিন নাগরিক বছরে গড়ে ২১৬ কিলোগ্রাম প্লাস্টিক ব্যবহার করেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো এবং জাপানেও মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ বেশি, যা যথাক্রমে ৮৬.৬ কিলোগ্রাম এবং ১২৯ কিলোগ্রাম।
প্লাস্টিক বর্জ্য মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি চুক্তির চেষ্টা চলছে।
কিন্তু গত ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে অনুষ্ঠিত আলোচনা ভেস্তে যায়, কারণ জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশগুলো, যেমন সৌদি আরব এবং রাশিয়া, চুক্তিতে উৎপাদনের সীমা অন্তর্ভুক্ত করতে রাজি হয়নি।
যদিও ১০০টির বেশি দেশ প্লাস্টিক উৎপাদন কমানো এবং কিছু রাসায়নিক ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বন্ধ করার পক্ষে ছিল।
আগামী আগস্টে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এই বিষয়ে পুনরায় আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্লাস্টিক দূষণ একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।
দেশের নদ-নদীগুলোতে, বিশেষ করে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদীতে প্লাস্টিকের বর্জ্য মারাত্মকভাবে বাড়ছে, যা জলজ জীবন এবং পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।
এছাড়াও, প্লাস্টিক বর্জ্য কৃষিজমি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
বর্তমানে, বাংলাদেশে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কিছু সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তবে, এই সমস্যা মোকাবিলায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে এই দূষণ কমানো সম্ভব।
তথ্যসূত্র: The Guardian