কাপড় থেকে বের হচ্ছে প্লাস্টিক! কিভাবে বাঁচবেন?

প্লাস্টিকের সূক্ষ্ম তন্তু: পোশাক থেকে নির্গত হয়ে পরিবেশের ক্ষতি।

আমরা যা পরিধান করি, তার থেকেও কি পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে? হ্যাঁ, পোশাকেও লুকিয়ে আছে পরিবেশ দূষণের এক নীরব ঘাতক।

সিনথেটিক বা কৃত্রিম তন্তু দিয়ে তৈরি পোশাক, যেমন পলিয়েস্টার, নাইলন, অ্যাক্রিলিক ইত্যাদি, ব্যবহারের সময় প্লাস্টিকের অতি ক্ষুদ্র কণা বা মাইক্রোফাইবার নির্গত করে। এই মাইক্রোফাইবারগুলো আমাদের অজান্তেই জলপথে মিশে যায় এবং মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনে।

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে, এই সমস্যাটি এখন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পোশাক ধোয়ার সময়, এমনকি কাপড় শুকানোর সময়ও এই মাইক্রোফাইবার নির্গত হয়।

ওয়াশিং মেশিনের মাধ্যমে নির্গত এই কণাগুলো আকারে এতই ছোট যে, তা পানি শোধনাগারগুলোতেও ধরা পড়ে না। ফলে, এই দূষিত জল গিয়ে মেশে নদী, খাল-বিল ও অবশেষে সমুদ্রে।

সেখানকার জলজ প্রাণীরা এই প্লাস্টিক কণা খেয়ে ফেলে এবং তা খাদ্য শৃঙ্খলের মাধ্যমে মানুষ পর্যন্ত পৌঁছায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক তন্তু থেকেও কিছু রাসায়নিক নির্গত হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তবে পলিয়েস্টার-এর মতো সিনথেটিক কাপড় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় এবং বিশ্বজুড়ে পোশাক তৈরির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই এই ধরনের তন্তু দিয়ে তৈরি।

তাহলে, এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় কী?

প্রথমত, আমাদের জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।

  • পোশাক কম ধুতে হবে।
  • গরম পানির পরিবর্তে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে হবে।
  • পুরো লোড দিয়ে কাপড় ধোয়ার চেষ্টা করতে হবে।
  • ছোট চক্রে কাপড় ধুতে হবে।
  • কাপড় শুকানোর জন্য ড্রায়ারের পরিবর্তে রোদে শুকাতে হবে।

এছাড়াও, বাজারে এখন কিছু বিশেষ লন্ড্রি পণ্য পাওয়া যায়, যা এই সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। যেমন, ‘কোরা বল’-এর মতো কিছু বল ওয়াশিং মেশিনে ব্যবহার করা হয়, যা কাপড়ের ঘর্ষণে মাইক্রোফাইবারের নির্গমন কমায়।

পোশাক প্রস্তুতকারকদেরও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। উন্নত বিশ্বে অনেক কোম্পানি পরিবেশবান্ধব উপায়ে পোশাক তৈরির চেষ্টা করছে। তারা এমন কাপড় তৈরি করছে, যা থেকে কম পরিমাণে মাইক্রোফাইবার নির্গত হয় এবং যা টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।

এই বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে এবং সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া গেলে, এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

বাংলাদেশেও কি এই সমস্যা রয়েছে?

অবশ্যই! আমাদের দেশেও সিনথেটিক কাপড়ের ব্যবহার বাড়ছে, বিশেষ করে পোশাক শিল্পে। ফলে, আমাদের নদ-নদী ও সমুদ্রগুলোতেও এই মাইক্রোফাইবারের দূষণ বাড়ছে।

এর ফলে জলজ পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে এবং মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে। তাই, এখনই সচেতন হওয়া জরুরি।

আসুন, আমরা সবাই মিলে এই বিষয়ে সচেতন হই এবং আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করি।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *