জাতিসংঘের উদ্যোগে সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে অনুষ্ঠিত হওয়া প্লাস্টিক দূষণ বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়া ভেস্তে গেছে। ১৮০টির বেশি দেশের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু উৎপাদন কমানো এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারায় আলোচনা ব্যর্থ হয়।
প্লাস্টিক দূষণ বর্তমানে একটি গুরুতর বৈশ্বিক সমস্যা। এর সমাধানে একটি আইনি কাঠামো তৈরির লক্ষ্যে ২০২২ সাল থেকে আলোচনা শুরু হয়। এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল প্লাস্টিকের উৎপাদন থেকে শুরু করে, ব্যবহার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রতিটি ধাপে দূষণ কমানো। কিন্তু বিভিন্ন দেশের মধ্যে তীব্র মতবিরোধের কারণে এটি আলোর মুখ দেখেনি।
আলোচনায় প্রধান বিতর্ক ছিল প্লাস্টিক উৎপাদন কমানো এবং পুনর্ব্যবহারের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া নিয়ে। অনেক দেশ, বিশেষ করে যারা প্লাস্টিক উৎপাদনকারী, তারা উৎপাদনের পরিবর্তে পুনর্ব্যবহার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপর জোর দিতে চাইছে। তাদের যুক্তি হলো, প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাই উৎপাদন কমানো সম্ভব নয়। অন্যদিকে, অনেক দেশ প্লাস্টিক উৎপাদন সীমিত করার পক্ষে। তাদের মতে, প্লাস্টিকের অতিরিক্ত উৎপাদনই দূষণের মূল কারণ।
সৌদি আরব ও রাশিয়ার মতো দেশগুলো এই চুক্তিতে উৎপাদন কমানোর বিরোধিতা করে। তারা মনে করে, পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরও কিছু দেশ প্লাস্টিক উৎপাদনের উপর বিধিনিষেধ আরোপের পক্ষে ছিল।
আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় পরিবেশ বিষয়ক সংগঠনগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, এই চুক্তির অভাবে প্লাস্টিক দূষণ কমানোর প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্তমানে বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৪৬ কোটি মেট্রিক টন প্লাস্টিক তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিলে ২০৪০ সাল নাগাদ এই উৎপাদন আরও ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর ফলে পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
প্লাস্টিক দূষণের কারণে সমুদ্র, নদী ও ভূমিতে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। প্লাস্টিক বর্জ্য জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। এছাড়া, প্লাস্টিকdegradation এর ফলে সৃষ্ট মাইক্রোপ্লাস্টিক মানবদেহে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যহানির কারণ হয়।
এই চুক্তির ব্যর্থতা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ। কারণ, প্লাস্টিক দূষণের ফলে সৃষ্ট ক্ষতির শিকার হয় মূলত তারাই। বাংলাদেশের নদী, উপকূল এবং কৃষি জমিতে প্লাস্টিক দূষণের প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো দুর্বল হয়ে পড়লে, উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে।
ভবিষ্যতে কবে নাগাদ আবার আলোচনা শুরু হবে, সে বিষয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে পরিবেশবাদীরা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। তাদের মতে, প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিবেশের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব আরও বাড়বে।
তথ্য সূত্র: CNN