পোকিমন কার্ড: বন্ধুদের আড্ডা, চুরির আতঙ্ক!

শিরোনাম: অস্ট্রেলিয়ায় পোকেমন কার্ডের জগতে আঘাত, চুরির ঘটনায় উদ্বেগে কমিউনিটি, টিকে আছে বন্ধুত্বের বন্ধন

পোকেমন, একসময়কার জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র, বর্তমানে শুধু শিশুদের বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি একটি বিশাল ব্যবসার ক্ষেত্রও বটে। পোকেমনের চরিত্রগুলো সংবলিত ট্রেডিং কার্ড গেম এখন বিশ্বজুড়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

এই গেমের কার্ড সংগ্রহ করা, এর একেকটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া, এসব এখন একটি সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু খেলা নয়, এই কার্ড গেমের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে শক্তিশালী বন্ধুত্বের সম্পর্ক, যা মানুষকে একতাবদ্ধ করছে।

সম্প্রতি, অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে পোকেমন কার্ডের দোকানগুলোতে চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এই কমিউনিটিতে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক মাসে ভিক্টোরিয়া রাজ্যে অন্তত ১৫টি দোকানে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে প্রায় পাঁচ লক্ষ ডলার মূল্যের কার্ড চুরি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই ঘটনার জেরে কার্ড গেমের সঙ্গে জড়িত মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

পোকেমন কার্ড গেমের সঙ্গে জড়িত, এমন একজন হলেন ক্লোয়ি অ্যাপলবি। তিনি একজন জাদুঘরের গেমসের কিউরেটর। তিনি জানান, পোকেমন কার্ডের চাহিদা অনেক বেড়েছে, কিন্তু সে তুলনায় সরবরাহ কম।

এর ফলে, সাধারণত ৫ ডলারের কার্ড এখন ২০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। এমনকি, কিছু দুষ্প্রাপ্য কার্ডের দাম ১৫০০ ডলারেরও বেশি। সংগ্রাহকদের কাছে এর চেয়েও বেশি দামে কার্ড বিক্রির নজির রয়েছে।

মেলবোর্নের ‘ওজি কালেক্টেবলস’-এর বিপণন ব্যবস্থাপক ডেইনা মর্টিমোর বলেন, “পোকেমন আমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় গেমগুলির মধ্যে একটি এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে, কারণ গেমটি সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়ছে।”

পোকেমন কার্ড গেম শুধু একটি খেলা নয়, বরং এটি একটি মিলনক্ষেত্রও। এখানে মানুষজন একত্রিত হয়ে বন্ধু তৈরি করে, আলোচনা করে এবং একে অপরের সঙ্গে সময় কাটায়। যেমন, উইলিয়াম রু নামের একজন সঙ্গীত শিক্ষক এই গেমের টানে প্রায়ই সিডনি থেকে আসেন।

তিনি জানান, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার জন্যই মূলত তার এখানে আসা।

স্থানীয় গেম স্টোরগুলো এই কমিউনিটির কেন্দ্র। এখানে নিয়মিত টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে খেলোয়াড়রা তাদের দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ পায়।

গেম স্টোরগুলোর মালিক লিন্ডসে হেমিং বলেন, “এটা অনেকটা পুরুষদের আড্ডার মতো। মানুষজন এখানে আসে, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে, গল্প করে। এটি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি সাপ্তাহিক মিলনমেলা।”

তবে, চুরির ঘটনা এই কমিউনিটির জন্য এক বিরাট ধাক্কা। দোকান মালিক জেসন ঝে বলেন, “এটা অনেকটা জীবন নৌকায় ভেসে থাকার মতো, আর চারপাশে যেন হাঙরের আনাগোনা।”

চুরির কারণে দোকানের কর্মীদের মধ্যে যেমন আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তেমনি খেলাধুলার পরিবেশও বিঘ্নিত হচ্ছে।

পুলিশ ইতোমধ্যে এই চুরির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

কমিউনিটির এই কঠিন সময়েও, পোকেমন কার্ডের প্রতি ভালোবাসা এবং বন্ধুত্বের বন্ধন অটুট রয়েছে। খেলোয়াড় এবং দোকান মালিকরা তাদের উদ্বেগের মধ্যেও আশাবাদী।

তারা এই সংকট কাটিয়ে উঠতে এবং আগের মতো খেলাধুলা চালিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *