পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: অভিবাসন থেকে শুরু করে ইইউ, কী হতে চলেছে?
আগামী বছর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে এখন থেকেই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। এই নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে রয়েছেন সেন্টার-রাইট সিভিক প্ল্যাটফর্মের রাফাল ট্রাসকোওস্কি এবং বিরোধী দল ল’ অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির সমর্থনপুষ্ট স্বতন্ত্র প্রার্থী ক্যারল নাওরোকি।
এই নির্বাচন পোল্যান্ডের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর ফল দেশটির অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট আন্দ্রজেজ দুদার উত্তরসূরি কে হবেন, তা নির্ধারণের পাশাপাশি এই নির্বাচন ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একইসঙ্গে, সরকার ও প্রেসিডেন্টের মধ্যে সহযোগিতা কতটা সুদৃঢ় হবে, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কারণ, সংস্কারমূলক পদক্ষেপগুলো সফলভাবে নেওয়ার জন্য এই সহযোগিতা অপরিহার্য।
নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে দুই প্রার্থীই ভোটারদের মন জয় করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। ট্রাসকোওস্কি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের পক্ষে মত দিয়েছেন, অন্যদিকে নাওরোকি জাতীয়তাবাদী সুরের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার কথা বলছেন।
অভিবাসনের বিষয়টিও নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ট্রাসকোওস্কি ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের সুযোগ-সুবিধা কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন, যেখানে নাওরোকি অভিবাসন নীতিতে কট্টর অবস্থান গ্রহণের কথা বলছেন।
এই ইস্যুতে দুই প্রার্থীর ভিন্ন অবস্থান অনেক ভোটারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পোল্যান্ডের জনমনে ইউক্রেনীয়দের প্রতি কিছুটা অসন্তুষ্টি দেখা যাচ্ছে, যার মূল কারণ হলো সীমিত জনসেবা এবং স্বাস্থ্যখাতে তাদের অংশগ্রহণ। যদিও এই ধারণাটি বাস্তবতার থেকে অনেক দূরে, কারণ অধিকাংশ ইউক্রেনীয়ই কাজ করে এবং কর প্রদান করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বারতোস রিডলিনস্কি মনে করেন, উদারপন্থী দলগুলোর উচিত মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। কারণ, তারা যদি কট্টর-ডানপন্থীদের সুরে কথা বলে, তবে ভোটারদের সমর্থন পাওয়ার পরিবর্তে নিজেদের সমর্থক হারাতে পারে।
পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিবাসন সংকটও একটি উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে, বেলারুশ থেকে আসা অভিবাসীদের ঢল নিয়ন্ত্রণে সরকারের নীতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
অনেকে মনে করেন, সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা প্রয়োজন।
এই নির্বাচনের ফল বর্তমান সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সরকারের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করবেন, নাকি বাধা দেবেন, তা একটি বড় প্রশ্ন।
যদি নাওরোকি জয়ী হন, তবে সরকারের সংস্কার কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পোল্যান্ডের এই নির্বাচন শুধু একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং এর আন্তর্জাতিক গুরুত্বও রয়েছে। কারণ, এর ফল ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পোল্যান্ডের সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে।
নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে, পোল্যান্ড ভবিষ্যতে কোন পথে হাঁটবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা