পোল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিতর্কের আগুনে ফুঁসছে দেশ!

পোল্যান্ডে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত বিতর্ক অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শুক্রবারের এই বিতর্কে আটজন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন, যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার ভীতি, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

পোল্যান্ডের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই দুদার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে আগামী ১৮ই মে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। যদি কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পান, তাহলে শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে জুন মাসের ১ তারিখে রানঅফ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হয় পোল্যান্ডের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত কোন্স্কি নামক একটি ছোট শহরে। এই শহরের ভোটাররা দেশটির রক্ষণশীল জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে, যা নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বিতর্কের শুরুতে হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। প্রথমে দুটি ডানপন্থী টিভি চ্যানেলে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হয়, যেখানে দর্শকদের মধ্যে অনেকে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে শিস ও ব্যঙ্গ করেন।

পরে, মূল বিতর্কটি টিভিএন, টিভিপি এবং পোলসাট সহ মূলধারার টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে সম্প্রচারিত হয়।

বিতর্কে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মধ্যে প্রধান ছিলেন ওয়ারশ’র মেয়র রাফাল ট্রাসকোওস্কি, যিনি উদারপন্থী হিসেবে পরিচিত, এবং রক্ষণশীল ইতিহাসবিদ ক্যারোল নাওরোকি। জনমত জরিপে ট্রাসকোওস্কি এগিয়ে আছেন, তবে নাওরোকিও তার কাছাকাছি রয়েছেন।

এছাড়াও আলোচনায় ছিলেন স্লোমির মেন্টজেন, যিনি তরুণদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। বিতর্কের বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল সেনাবাহিনীর বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ ফিরিয়ে আনা, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা এবং এলজিবিটি সম্প্রদায়ের অধিকার সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পোল্যান্ডের এই নির্বাচন দেশটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশটির নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নতুন করে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।

পোল্যান্ড, ন্যাটোর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এবং ইউক্রেনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। দেশটি ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে এবং শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে।

বিতর্কে, প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি কেনার বিরোধিতা করেন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপর গুরুত্ব দেন। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি নিয়েও অনেক উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

বিতর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল এলজিবিটি অধিকার। নাওরোকি ট্রাসকোওস্কিকে এই ইস্যুতে আক্রমণ করেন এবং একটি রংধনু পতাকা নিয়ে বিতর্কে হাজির হন। এই ঘটনার মাধ্যমে পোল্যান্ডের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিদ্যমান বিভাজন আরও একবার স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *