পোল্যান্ডে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয় এবং রাজধানী ওয়ারশ’র মেয়র রাফাল ট্রাজাসকোভস্কি এবং রক্ষণশীল ইতিহাসবিদ ক্যারোল নাওরোকির মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নির্বাচনের ফল সোমবার ঘোষণা করা হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচন পোল্যান্ডের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
একদিকে, ইউরোপপন্থী প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলেছে, অন্যদিকে, সাবেক ক্ষমতাসীন ল’ অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির জাতীয়তাবাদী ধারা ফিরে আসার সম্ভাবনাও রয়েছে।
যদি কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট পেতে ব্যর্থ হন, তাহলে আগামী ১লা জুনের মধ্যে রানঅফ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
নির্বাচনে জয়ী ব্যক্তি সীমিত ক্ষমতা পেলেও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে তিনি পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আইনসভার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারবেন।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ডুডার মেয়াদ শেষ হওয়ায় এই নির্বাচনে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হবে।
নির্বাচনী প্রচারণার মূল বিষয় ছিল পররাষ্ট্রনীতি। পোল্যান্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ ন্যাটো এবং ইইউ সদস্যরাষ্ট্র, যা ইউক্রেনের সঙ্গে সীমান্ত শেয়ার করে।
ফলে, এই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিশ্রুতি দুর্বল হতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে।
ট্রাজাসকোভস্কি ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে পোল্যান্ডের অবস্থান সুসংহত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে, নাওরোকি নিজেকে রক্ষণশীল মূল্যবোধের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন।
নির্বাচনী প্রচারের সময় সামাজিক বিষয়গুলোও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ট্রাজাসকোভস্কি গর্ভপাত এবং এলজিবিটিকিউ অধিকারের সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা উদারপন্থী ভোটারদের সমর্থন আদায় করেছে।
অন্যদিকে, নাওরোকির প্রচারণা হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার সাক্ষাতের মাধ্যমে আরও গতি পেয়েছিল। যদিও পরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তিনি একটি বৃদ্ধকে আজীবন দেখাশোনার বিনিময়ে একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
নাওরোকি অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নির্বাচন চলাকালীন সময়ে বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। টাস্কের ক্ষমতাসীন জোটের ওয়েবসাইটগুলোতে ডিনায়াল-অব-সার্ভিস অ্যাটাক এবং সামাজিক মাধ্যমে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশি অর্থায়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আনা মাতেরস্কা-সোসনোভস্কার মতে, নাওরোকি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে সরকারের কার্যক্রম স্থবির হয়ে যেতে পারে এবং এর ফলস্বরূপ ক্ষমতাসীন জোটের পতন হতে পারে।
তিনি আরও মনে করেন, নাওরোকির বিজয় পরবর্তী নির্বাচনে “জনতাবাদীদের নতুন উদ্যমে” ফিরিয়ে আনতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা