পোল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে ডানপন্থী প্রার্থীদের জয়জয়কার, দ্বিতীয় রাউন্ডের দিকে তাকিয়ে পোলিশ জনতা।
পোল্যান্ডে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এই নির্বাচনে ডানপন্থী ও চরম ডানপন্থী দলগুলোর প্রার্থীদের ভালো ফল দেখা গেছে, যা প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য একটি সতর্কবার্তা। নির্বাচনের ফলাফলে উদারপন্থী প্রার্থী হিসেবে পরিচিত ওয়ারশ-এর মেয়র রাফাল ট্রাজাসকোস্কি সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে, রক্ষণশীল প্রার্থী হিসেবে ল’ অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির সমর্থনপুষ্ট ক্যারল নাওরোকির অবস্থানও বেশ শক্ত।
সোমবার প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা গেছে, রাফাল ট্রাজাসকোস্কি পেয়েছেন ৩১.৩৬ শতাংশ ভোট, আর ক্যারল নাওরোকি পেয়েছেন ২৯.৫৪ শতাংশ ভোট। ১৩ জন প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে, যেখানে ট্রাজাসকোস্কি ও নাওরোকি এগিয়ে রয়েছেন। আগামী ১লা জুন অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় রাউন্ডের দিকে এখন তাকিয়ে আছে পোল্যান্ডবাসী।
এই নির্বাচন শুধু একজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয় নয়, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে পোল্যান্ডের সম্পর্ক কেমন হবে, তা অনেকাংশে নির্ভর করছে এই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। দীর্ঘদিন ধরে ল’ অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির শাসনামলে ব্রাসেলসের সঙ্গে পোল্যান্ডের সম্পর্ক বেশ তিক্ত ছিল। প্রধানমন্ত্রী টাস্ক সেই সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করছেন, তবে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আন্দ্রেজ ডুডার কারণে বিচার বিভাগে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে তার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়াও, অনেকে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী টাস্ক তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করতে পারেননি, যেমন—গর্ভপাতের ওপর কঠোর আইন শিথিল করা। এমনকি সরকারি গণমাধ্যমকে ল’ অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনার ক্ষেত্রেও তিনি সমালোচিত হয়েছেন।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর পরই দুই প্রধান প্রার্থী ভোটারদের সঙ্গে দেখা করতে রাস্তায় নেমেছেন। ট্রাজাসকোস্কি কিলসে শহরে মিষ্টি বিতরণ করেন, অন্যদিকে নাওরোকি গডানস্কে সমর্থকদের সঙ্গে ছবি তোলেন এবং ডোনাট বিতরণ করেন।
২০২০ সালের নির্বাচনেও ট্রাজাসকোস্কি বর্তমান প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ডুডার কাছে সামান্য ভোটে হেরেছিলেন। তবে এবার তিনি জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছেন না। নাওরোকি তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “আমি বিজয়ের জন্য প্রস্তুত।” অন্যদিকে, ট্রাজাসকোস্কি তরুণ ভোটার ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, “একটি স্বাভাবিক পোল্যান্ডের জন্য ভোট দিন, উগ্রবাদী পোল্যান্ডের জন্য নয়।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রথম রাউন্ডে অন্যান্য প্রার্থীদের পাওয়া ভোট দ্বিতীয় রাউন্ডে সরাসরি তাদের দিকে নাও যেতে পারে। কারণ অনেক ভোটার হয়তো তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে না পারলে ভোট দিতে নাও যেতে পারেন।
অন্যদিকে, চরম ডানপন্থী দলগুলোও নির্বাচনে ভালো ফল করেছে। কনফেডারেশন পার্টির স্লাভোমির মেন্টজেন ১৪.৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন, আর আরও ডানপন্থী গ্রেগর্জ ব্রাউন ৬ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছেন। এই দলগুলোর নেতারা বিভিন্ন সময়ে ইহুদি-বিদ্বেষী এবং ইউক্রেন-বিরোধী মন্তব্য করেছেন। এমনকি ব্রাউন ২০১৫ সালে পোলিশ পার্লামেন্টে হানুক্কার জন্য জ্বালানো মোমবাতি নেভাতে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর জোট সরকার, যেখানে বাম, মধ্যপন্থী এবং ডানপন্থী দলগুলো রয়েছে, তারা সম্মিলিতভাবে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস