পোল্যান্ডে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দ্বিতীয় রাউন্ড: দুই প্রার্থীর লড়াই
পোল্যান্ডের আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে এখন সবার নজর। আগামী ১ জুন এই নির্বাচনের দ্বিতীয় রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন দুই হেভিওয়েট প্রার্থী – রাফাল ট্রাজাসকোওস্কি এবং কারো্ল নাভরোতস্কি। প্রথম রাউন্ডের ভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর এখন চূড়ান্ত ফলাফলের দিকে তাকিয়ে পোল্যান্ডবাসী।
প্রথম রাউন্ডে, ক্ষমতাসীন সিভিক প্ল্যাটফর্মের প্রার্থী ট্রাজাসকোওস্কি ৩১.১ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। অন্যদিকে, ডানপন্থী দল ল অ্যান্ড জাস্টিস (পিস)-এর সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাভরোতস্কি ২৯.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। পোল্যান্ডে ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সরকার চালিয়েছিল পিস পার্টি।
বর্তমানে বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান খুবই সামান্য দেখা যাচ্ছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ৪৭.৭ শতাংশ ভোটার ট্রাজাসকোওস্কিকে এবং ৪৬ শতাংশ নাভরোতস্কিকে সমর্থন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এই নির্বাচনে জয়ী ব্যক্তি বর্তমান রাষ্ট্রপতি আন্দ্রেই দুদার স্থলাভিষিক্ত হবেন। দুদা রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত এবং পিস পার্টির সমর্থনপুষ্ট ছিলেন। তার সময়ে বিচার বিভাগে সংস্কার আটকে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাজাসকোওস্কি এবং নাভরোতস্কির মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে তীব্র বিতর্ক হয়েছে। এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর ভবিষ্যৎ, জাতীয় নিরাপত্তা এবং সামাজিক মূল্যবোধ অন্যতম। অভিবাসন নীতি নিয়েও দুই প্রার্থীর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
এমনকি, ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের প্রতি তাদের কঠোর মনোভাব অনেক পোলিশ নাগরিকের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। ট্রাজাসকোওস্কি প্রস্তাব করেছেন, কেবল কর্মক্ষম ইউক্রেনীয়রাই যেন পোল্যান্ডের শিশু সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হন।
অন্যদিকে, নাভরোতস্কি ইউক্রেনের ন্যাটো বা ইইউতে যোগদানের বিরোধিতা করেন।
ট্রাজাসকোওস্কি নিজেকে উদারপন্থী হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি অতীতে সমকামীদের অধিকার এবং দেশের কঠোর গর্ভপাত আইনের উদারীকরণের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, নাভরোতস্কি রক্ষণশীল এবং ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছেন। তার প্রচারণায় অভিবাসন এবং ইইউ বিরোধী সুর ছিল স্পষ্ট।
নির্বাচনের আগে দুই প্রার্থীর সঙ্গেই বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয় জড়িয়েছে। ট্রাজাসকোওস্কির বিরুদ্ধে একটি ফ্ল্যাট কেনার অভিযোগ উঠেছে, যেখানে বয়স্ক এক ব্যক্তিকে দেখাশোনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা পূরণ করা হয়নি।
নাভরোতস্কির বিরুদ্ধেও অতীতে কিছু বিতর্কিত ঘটনার অভিযোগ উঠেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীর ওপর নির্ভর করবে পোল্যান্ডের ভবিষ্যৎ নীতি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে।
ট্রাজাসকোওস্কি নির্বাচিত হলে, তিনি ইইউ-এর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে এবং বিচার বিভাগের সংস্কারে মনোযোগ দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। নাভরোতস্কি জয়ী হলে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দেবেন এবং ইইউ-এর সঙ্গে পোল্যান্ডের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
পোল্যান্ডের এই নির্বাচন দেশটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। তাই, এই নির্বাচনের দিকে শুধু পোল্যান্ড নয়, বরং সারা বিশ্বের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরও নজর রয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা