শিকাগোর দুই বাসিন্দার জীবন, যাদের পুলিশি ষড়যন্ত্রে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, অবশেষে কয়েক দশক পর মুক্তি মিলেছে, কিন্তু ন্যায়বিচার যেন আজও অধরা।
১৯৮৯ সালের ডিসেম্বরে, জেমস গিবসন এবং কেইথ স্মিথ নামের দুই যুবককে শিকাগো শহরের একটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের প্রতিবেশী, যাদের সাথে তাদের ভালো সম্পর্ক ছিল, তাদের হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।
পুলিশি হেফাজতে, তাদের ওপর চলে অকথ্য নির্যাতন। জেমস গিবসনকে দিনের পর দিন মারধর করা হয়, এমনকি জ্ঞান হারানোর মতো ঘটনাও ঘটে। কেইথ স্মিথকেও একই ধরনের অত্যাচারের শিকার হতে হয়।
নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে, মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হন তারা। সেই স্বীকারোক্তিতে দুজনেই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
পরবর্তীকালে, এই মিথ্যা সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দু’জনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসল ঘটনা ছিল, তাদের কাছ থেকে মিথ্যা কথা আদায় করার জন্য পুলিশ অফিসার জন বার্গের নেতৃত্বে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের নির্যাতন চালাচ্ছিল। তাদের টার্গেট ছিল, কোনো না কোনোভাবে ঘটনার সাথে জড়িত প্রমাণ করে ভুক্তভোগীদের ফাঁসানো।
কারাগারে থাকাকালীন, জেমস গিবসন আইনি সহায়তা নিয়ে নিজের মুক্তির জন্য লড়াই চালিয়ে যান। অন্যদিকে, কেইথ স্মিথ, প্রথমে হতাশ হয়ে পড়লেও পরে উপলব্ধি করেন যে তারাও মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন।
অবশেষে, ২০১২ সালে কেইথ স্মিথ মুক্তি পান, যদিও তিনি ‘আলফোর্ড প্লী’ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, যেখানে তিনি নিজের দোষ স্বীকার না করেও কারাদণ্ড কমানোর সুযোগ পান। অন্যদিকে, জেমস গিবসন, দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর ২০১৯ সালে সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণিত হন এবং মুক্তি পান।
মুক্তির পর, গিবসন ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ১৪.৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৫৭ কোটি টাকার বেশি) পান। কিন্তু স্মিথ ‘আলফোর্ড প্লী’ নেওয়ার কারণে কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি।
এই ঘটনার পর, গিবসন তার জীবনের অনেক মূল্যবান বছর হারানোর বেদনা অনুভব করেন। অন্যদিকে, স্মিথ এখনো একটি স্থায়ী ঠিকানা এবং ভালো একটি কাজের জন্য সংগ্রাম করছেন।
এই ঘটনাটি, পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিচার বিভাগের দুর্বলতার একটি মর্মান্তিক উদাহরণ। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ন্যায়বিচার পেতে কত কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়, এবং সমাজের দুর্বল মানুষগুলো কীভাবে প্রায়ই অন্যায় বিচারের শিকার হয়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন