ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলার কারণে মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আটক হওয়া মাহমুদ খলিলের মুক্তি চেয়েছেন তার আইনজীবী এবং সমর্থকরা। সম্প্রতি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা এই ফিলিস্তিনি নাগরিক দাবি করেছেন, তাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আটক করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, মাহমুদ খলিল এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমি একজন রাজনৈতিক বন্দী।” তিনি বর্তমানে লুইজিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টারে বন্দী জীবন যাপন করছেন। সেখানে তিনি সকালে ঠান্ডা পরিবেশে ঘুম থেকে ওঠেন এবং আইনের সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়া অনেক মানুষের নীরব কষ্ট প্রত্যক্ষ করেন।
মাহমুদ খলিল, যিনি একজন স্থায়ী মার্কিন বাসিন্দা এবং গত বছর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, গত ৮ই মার্চ নিউইয়র্ক থেকে ফেডারেল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গ্রেফতার হন। কর্তৃপক্ষের দাবি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তার গ্রিন কার্ড বাতিল করার জন্যই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
খলিল আরও জানান, ট্রাম্প প্রশাসন তাকে “মত প্রকাশের স্বাধীনতা” দমন করার বৃহত্তর কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে এবং এর মাধ্যমে ভিসা-হোল্ডার, গ্রিন কার্ডধারী এবং মার্কিন নাগরিকদেরও রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে টার্গেট করা হবে।
খলিল তার পরিবার ও বন্ধুদের মাধ্যমে লুইজিয়ানার একটি ICE ডিটেনশন সেন্টার থেকে পাঠানো বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের প্রতি দেশটির আচরণ, গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলা, মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শাস্তির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বিবৃতিতে খলিল বলেন, “আমার গ্রেফতার ছিল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং গাজায় গণহত্যার অবসান চেয়ে আমার বাকস্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগের সরাসরি ফল।” তিনি আরও বলেন, “জানুয়ারীর যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর গাজার অভিভাবকরা আবারও শিশুদের কাফন পড়াচ্ছেন, পরিবারগুলো বোমা ও দুর্ভিক্ষের মধ্যে জীবন ধারণের চেষ্টা করছে। তাদের পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া নৈতিক দায়িত্ব।
খলিলের গ্রেফতারের সময়কার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, নিউইয়র্কের তার অ্যাপার্টমেন্টে, যেখানে তার স্ত্রী, নূরের আট মাসের সন্তান রয়েছে, সেখানে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় কর্মকর্তারা কোনো ওয়ারেন্ট দেখাতে রাজি হননি এবং তাকে একটি সাদা গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। খলিল বলেন, “তখন আমার একমাত্র চিন্তা ছিল নূরের নিরাপত্তা। আমি জানতাম না তাকেও তারা নিয়ে যাবে কিনা।
এরপর তাকে প্রথমে নিউ জার্সির একটি ICE সেন্টারে এবং পরে ১,৪০০ মাইল দূরে লুইজিয়ানার ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার প্রথম রাতে তিনি মেঝেতে, কোনো কম্বল ছাড়াই ঘুমিয়ে ছিলেন।
লুইজিয়ানার ডিটেনশন সেন্টারের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে খলিল বলেন, সেখানে তিনি “ঠান্ডা সকালে” ঘুম থেকে ওঠেন এবং “আইনের সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়া অনেক মানুষের নীরব কষ্ট” দেখেন। তিনি প্রশ্ন করেন, “কার অধিকার আছে? এখানকার সেলের মানুষগুলোর তো কোনো অধিকার নেই। আমি সেখানে সেনেগালের একজন মানুষের সাথে দেখা করেছি, যিনি এক বছর ধরে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন, তার আইনি প্রক্রিয়া এখনো ঝুলে আছে এবং তার পরিবার অনেক দূরে।
খলিল তার বর্তমান পরিস্থিতিকে ইসরায়েলি সরকারের প্রশাসনিক আটকের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা ফিলিস্তিনিদের অধিকার হরণ করে। তিনি বলেন, “আমি সিরিয়ার একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেছি, যেখান থেকে আমার পরিবার ১৯৪৮ সালের নাকবার (Nakba) পর বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।
খলিলের গ্রেফতারের ঘটনায় তার সমর্থক এবং মুক্তচিন্তার অধিকারকর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বাকস্বাধীনতার পরিপন্থী।
খলিলের আইনজীবীরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন তার রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং সংবিধান স্বীকৃত মত প্রকাশের অধিকারের প্রতিশোধ হিসেবে অন্যায়ভাবে এই কাজ করছে। তারা নিউইয়র্কের আদালতে তার মুক্তি চেয়ে আবেদন করেছেন। আদালত খলিলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় এবং ক্ষমতায় আসার পরও ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে জড়িত বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
খলিলের আইনজীবীরা বলছেন, সাবেক এই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা ১৯৫২ সালের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের একটি বিরল ধারা ব্যবহার করে তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছেন।
ফেডারেল প্রসিকিউটররা নিউইয়র্কের আদালতকে খলিলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ লুইজিয়ানায় সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিতে বলেছেন, যেখানে বিচারকরা তুলনামূলকভাবে রক্ষণশীল।
মাহমুদ খলিলের আইনজীবী দিয়ালা শামাস বলেছেন, খলিলের সঙ্গে যা ঘটছে, তার প্রভাব শুধু তার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। তিনি আরও বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, এটি তাদের পরীক্ষার অংশ এবং ভবিষ্যতে আরও অনেক কিছু আসতে চলেছে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।