পম্পেইয়ের ধ্বংসস্তূপে : আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে রক্ষা পেতে আশ্রয় খোঁজা মানুষের এক মর্মস্পর্শী কাহিনী।
প্রাচীন ইতালির শহর পম্পেই, যা এক সময় তার সমৃদ্ধির জন্য পরিচিত ছিল, ৭৯ খ্রিস্টাব্দে ভিসুভিয়াস পর্বতের অগ্ন্যুৎপাতে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। সম্প্রতি, প্রত্নতত্ত্ববিদরা সেই ধ্বংসাবশেষের মধ্যে মানুষের চরম অসহায়ত্বের এক হৃদয়বিদারক চিত্র খুঁজে পেয়েছেন।
তারা একটি বাড়ির ভেতরে, যেখানে সম্ভবত একটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের শেষ মুহূর্তের কিছু চিহ্ন আবিষ্কার করেছেন।
পম্পেইয়ের ‘হাউস অফ হেল ও ফ্রিক্সাস’ নামক স্থানে খননকার্য চালানোর সময়, গবেষকরা একটি বেডরুমের দরজার কাছে আসবাবপত্র দিয়ে তৈরি করা একটি ব্যারিকেড খুঁজে পান। ধারণা করা হচ্ছে, আগ্নেয়গিরির লাভা ও ছাই থেকে বাঁচতে ঘরটির ভেতরে থাকা চারজন, যাদের মধ্যে একটি শিশুও ছিল, তারা এই আশ্রয় তৈরি করেছিলেন।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা কেউই সেই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বাঁচতে পারেনি।
গবেষক দলের প্রধান গাব্রিয়েল জুখট্রিগেল বলেন, “পম্পেই খনন করা মানে শিল্পের সৌন্দর্য্যের মুখোমুখি হওয়া, এবং একই সঙ্গে আমাদের জীবনের অনিশ্চয়তা উপলব্ধি করা।”
ঐতিহাসিক এই বাড়িটি, যা সম্ভবত সেসময় সংস্কার করা হচ্ছিল, তার দেয়ালে হেল ও ফ্রিক্সাসের মিথ সম্পর্কিত একটি চিত্রও পাওয়া গেছে।
গ্রিক পুরাণের এই কাহিনীতে, হেল ও ফ্রিক্সাস তাদের সৎ মা ইনোর (Ino) কাছ থেকে বাঁচতে সোনার লোমযুক্ত একটি ভেড়ার পিঠে চড়ে পালিয়ে যায়।
কিন্তু পালানোর সময় হেল সমুদ্রে পড়ে যায়, এবং সেই সমুদ্রের নাম হয় হেলস্পন্ট। যেন এই ছবি, অগ্ন্যুৎপাতের সময় আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোর অসহায়তাকে আরও গভীর করে তোলে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, সম্ভবত অগ্ন্যুৎপাতের প্রথম পর্যায়ে ঘরটির ভেতরে থাকা মানুষগুলো বৃষ্টির মতো ঝরে পড়া লাভা ও ছাই থেকে বাঁচতে দ্রুত বেডরুমে আশ্রয় নেয় এবং দরজা বন্ধ করে দেয়।
কিন্তু পরবর্তীতে, যখন অগ্ন্যুৎপাতের ধ্বংসযজ্ঞ আরও বাড়ে, তখন সম্ভবত তারা পালানোর চেষ্টা করে, এবং সেসময়ই তাদের মৃত্যু হয়।
ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও পাওয়া গেছে ব্রোঞ্জের তৈরি একটি বুল্লা (bulla), যা একসময় ছেলেদের শৈশবে পরানো হতো, এবং তরল জমা করে রাখার জন্য ব্যবহৃত অ্যাম্ফোরা (amphorae)।
অ্যাম্ফোরার মধ্যে ছিল গ্যারাম (garum), যা এক প্রকারের মাছ থেকে তৈরি হওয়া সস। এছাড়াও ব্রোঞ্জের তৈরি কিছু পাত্রও সেখানে পাওয়া গেছে।
গবেষক জুখট্রিগেল আরও বলেন, “পম্পেইয়ের প্রতিটি বাড়িই আলাদা। প্রত্যেকটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, স্বতন্ত্র সজ্জা, এবং বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র রয়েছে। যা সেই সময়ের মানুষের রুচি, তাদের ভালো-মন্দ এবং তাদের আকাঙ্ক্ষাগুলো প্রকাশ করে।”
পম্পেইয়ের এই ঘটনা, যা আজ থেকে কয়েক শতাব্দী আগের, তা আজও আমাদের জীবনের অনিশ্চয়তা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শেখায়। এটি যেন সেই মানুষদের প্রতিচ্ছবি, যারা মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বাঁচার আশা নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল।
তথ্য সূত্র: সিএনএন