হৃদয়কে আক্রমণ করে ‘শ্বেত পদ্ম’র ভয়ঙ্কর ফল: আসল ঘটনা!

শিরোনাম: মারাত্মক পং পং গাছ: হৃদযন্ত্রের জন্য ভয়ঙ্কর বিপদ

“হোয়াইট লোটাস” (White Lotus) ওয়েব সিরিজে প্রদর্শিত একটি গাছের কথা বর্তমানে অনেকেরই জানা। থাইল্যান্ডে চিত্রায়িত এই সিরিজের একটি দৃশ্যে পং পং গাছের ফল খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। বাস্তবে, এই গাছটি এতটাই বিষাক্ত যে এর ফল খেলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

আসলে, পং পং গাছ (বৈজ্ঞানিক নাম: Cerbera odollam) একটি মারাত্মক বিষাক্ত উদ্ভিদ। এটি সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং উত্তর অস্ট্রেলিয়ার কিছু অঞ্চলে পাওয়া যায়। এই গাছের ফল দেখতে অনেকটা পীচ ফলের মতো, যার ভেতরে থাকে বীজ।

এই বীজের মধ্যে “সারবেরিন” (cerberin) নামক এক প্রকার বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ থাকে।

সারবেরিন মূলত হৃদযন্ত্রের উপর আক্রমণ করে। শরীরে প্রবেশ করার পর এটি হৃদস্পন্দনকে মারাত্মকভাবে কমিয়ে দিতে পারে, এমনকি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ করে দিতেও সক্ষম।

বিষক্রিয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে বমি, ডায়রিয়া এবং বুক ধড়ফড় করা।

ঐতিহ্যগতভাবে, মানুষ এই গাছের বীজ থেকে তৈরি বিষ ব্যবহার করে এসেছে। অতীতে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে, অথবা হত্যার উদ্দেশ্যে এই বিষ ব্যবহার করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এমনকি, একসময় বিভিন্ন ডাইনি শিকারের সময়ও এই বিষের ব্যবহার হতো।

কেরালার একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে ভারতে সংঘটিত উদ্ভিদ বিষক্রিয়ার প্রায় অর্ধেক এবং মোট বিষক্রিয়ার দশমাংশের জন্য এই পং পং গাছই দায়ী ছিল।

ধারণা করা হয়, অতীতে প্রতি বছর প্রায় ৩,০০০ মানুষ এই গাছের বিষক্রিয়ায় মারা যেত।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, পং পং গাছের বিষের কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষেধক নেই। আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হয় এবং সেখানে কিছু সহায়ক চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে রোগীর জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়।

তবে, অনেক সময় চিকিৎসা সত্ত্বেও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।

বর্তমানে অনলাইনে এই গাছের বীজ ও চারাগাছ বিক্রি হচ্ছে, যা উদ্বেগের কারণ। কারণ, এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই বিষাক্ত গাছটির বিস্তার ঘটছে।

তাই, এই গাছের বিষয়ে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। অপরিচিত কোনো ফল বা গাছের বীজ খাওয়ার আগে অবশ্যই সতর্ক হওয়া উচিত।

তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *