পোপ ফ্রান্সিস, যিনি বর্তমানে ভ্যাটিকান সিটিতে অবস্থান করছেন, সম্প্রতি ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ৮৮ বছর বয়সী পোপের শারীরিক অবস্থা এতটাই সংকটজনক হয়ে গিয়েছিল যে জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে চিকিৎসকদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল।
ইতালির একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, চিকিৎসকেরা তখন দ্বিধায় ছিলেন – চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া হবে, নাকি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
পোপের চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন ডাক্তার সার্জিও আলফেরি। তিনি জানিয়েছেন, হাসপাতালে থাকাকালীন পোপের শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়েছিল, এমনকী একবার তিনি বমিও করেছিলেন।
সেই সময় তাঁর শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, অনেক সময় মনে হচ্ছিল, হয়তো তিনি আর বাঁচবেন না। ডাক্তার আলফেরি আরও জানান, সংকটজনক পরিস্থিতিতে তাঁরা চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
তাঁদের ধারণা ছিল, চেষ্টা চালিয়ে গেলে হয়তো অন্য কোনো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু তাঁরা হাল ছাড়তে রাজি ছিলেন না।
পোপের ব্যক্তিগত নার্স মাসিমিলিয়ানো স্ট্রাপ্পেত্তি তাঁদের চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। তিনি বলেছিলেন, “সবকিছু চেষ্টা করুন, হাল ছাড়বেন না।”
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পোপ নিজেও তাঁর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তিনি সবসময় চিকিৎসকদের কাছে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির সঠিক তথ্য জানতে চেয়েছিলেন।
ডাক্তার আলফেরি জানান, এই কঠিন সময়ে তাঁর আশেপাশের অনেককে চোখের জল ফেলতে দেখেছেন, যারা পোপকে পিতার মতো ভালোবাসেন।
হাসপাতালে থাকাকালীন পোপের আরও কয়েকবার শ্বাসকষ্ট হয়েছিল। এর মধ্যে খাবার খাওয়ার সময় বমি হয়ে তাঁর ফুসফুসে আরও চাপ সৃষ্টি হয়।
ডাক্তার আলফেরি বলেন, “এই ধরনের পরিস্থিতিতে দ্রুত সাহায্য না পেলে হঠাৎ মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ ছিল এবং আমরা ভেবেছিলাম তিনি হয়তো আর বাঁচবেন না।”
তবে ধীরে ধীরে পোপের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। ১০ই মার্চ চিকিৎসকেরা জানান, তিনি এখন আর কোনো আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে নেই।
সুস্থ হওয়ার পরে তিনি হুইলচেয়ারে করে ওয়ার্ডে ঘোরাফেরা করতেন এবং তাঁর চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের জন্য একদিন রাতের খাবার হিসেবে পিৎজা অর্ডার করেছিলেন।
চিকিৎসা শেষে পোপকে ভ্যাটিকানের সান্তা মার্তা হাউসে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। সেখানে তিনি অন্তত দু’মাস বিশ্রাম নেবেন এবং চিকিৎসা চালিয়ে যাবেন।
ডাক্তার আলফেরি জানিয়েছেন, পোপের পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও কিছু সময় লাগবে।
উল্লেখ্য, অল্প বয়সে প্লুরিসি (Pleurisy) হওয়ার কারণে পোপের ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তিনি যখন আর্জেন্টিনার ধর্মযাজক হওয়ার প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন, তখন তাঁর ফুসফুসের একটি অংশ অপসারণ করা হয়েছিল।
তথ্য সূত্র: The Guardian