পোপের মৃত্যুর পর: ফ্যাশন আইকন হয়ে ওঠা ফ্রান্সিসের অজানা গল্প!

পোপ ফ্রান্সিস: এক সাধারণ পোশাকে নতুন দৃষ্টান্ত

ফ্যাশন হয়তো কোনো ধর্মগুরুর জীবন নিয়ে আলোচনার প্রথম বিষয় নয়, কিন্তু প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের পোশাক-পরিচ্ছদের একটা নিজস্বতা ছিল।

সোমবার তিনি মারা যান, কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া স্মৃতি আজও অম্লান। সাদা রঙের আলখাল্লা, সাধারণ কালো চামড়ার জুতা—এটাই ছিল তাঁর পোশাকের বৈশিষ্ট্য।

২০১৩ সালে পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তাঁর এই পোশাকের ধরন সবার নজর কাড়ে। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রথম এই বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।

তারা লিখেছিল, পোপ ফ্রান্সিস তাঁর সাধারণ কালো জুতা এবং সাধারণ হাতঘড়ির মাধ্যমে পোপতন্ত্রের ধারণাই বদলে দিয়েছেন। তাঁর এই সাদাসিধে পোশাক ছিল আগের পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বেনেডিক্ট ঝলমলে ক্রুশ, উজ্জ্বল লাল রঙের জুতা এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরতেন।

পোপ ফ্রান্সিসের পোশাকের প্রশংসা আসতে বেশি সময় লাগেনি। ‘দ্য কাট’ পত্রিকা তাঁকে ‘বিশ্বের নরমকোর পোপ’ হিসেবে অভিহিত করে।

কারণ, তাঁর পোশাক ছিল খুবই সাধারণ এবং বাহুল্যবর্জিত। এমনকি, তিনি প্রথম পোপ যিনি ‘রোলিং স্টোন’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে স্থান করে নিয়েছিলেন।

২০১৬ সালে ‘এস্কয়্যার’ তাঁকে ‘সেরা পোশাক পরা ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর তাঁর ছবি দিয়ে টি-শার্ট, সোয়েটশার্ট এবং মগ তৈরি হতে থাকে।

এস্কয়্যারের ম্যাক্স বেরলিংগার লিখেছিলেন, “ব্র্যাডলি কুপার, ক্রিস পাইন এবং জোসেফ গর্ডন-লেভিটের মতো তারকারা তাঁদের পোশাকের জন্য পরিচিত।

কিন্তু পোপ ফ্রান্সিসের পোশাকের মাধ্যমে ক্যাথলিক চার্চে নতুন এক যুগের সূচনা হয়েছে, যা অনেকের কাছে নতুন আশা জাগিয়েছে।”

বেরলিংগার আরও জানান, এস্কয়্যারের ইতিহাসে এই নিবন্ধটি সবচেয়ে বেশি পঠিত হয়েছিল। এমনকি তাঁকে বিভিন্ন টকশো-তে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।

তিনি বলেন, “আমার মনে হয়েছিল, বিষয়টি বেশ আকর্ষণীয় এবং উল্লেখ করার মতো। আগের পোপ প্রচুর দামি এবং অলঙ্কৃত পোশাক পরতেন।

অন্যদিকে, পোপ ফ্রান্সিস কারাগারে গিয়ে বন্দীদের পা ধুয়ে দিতেন। আমার মনে হয়েছিল, এটা একটা বড় পরিবর্তনের অংশ, এবং তাঁর পোশাক সেই পরিবর্তনেরই প্রতিচ্ছবি।”

আগের পোপের থেকে তাঁর পোশাকের এই ভিন্নতা অনেক গভীর অর্থ বহন করে। ক্যাথলিক চার্চের প্রধান হিসেবে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যও ফুটে ওঠে পোশাকে।

এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম ও শিল্পকলার ইতিহাসবিদ ক্যারল রিচার্ডসন এক সাক্ষাৎকারে জানান, ষোড়শ বেনেডিক্ট পোশাকের মাধ্যমে অতীতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে চেয়েছেন।

তিনি প্রাচীন রীতি-নীতি এবং ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। প্রথম পোপ সেন্ট পিটার থেকে শুরু করে বেনেডিক্ট পর্যন্ত, এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তিনি পোশাকের মাধ্যমে চেষ্টা করেছেন।

অন্যদিকে, পোপ ফ্রান্সিস, যিনি প্রথম জেসুইট পোপ, তাঁর অগ্রাধিকার ছিল ভিন্ন। জেসুইটরা ভাষা, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, ইতিহাস এবং বক্তৃতার ওপর গুরুত্ব দেন।

রিচার্ডসন ব্যাখ্যা করেন, “তাঁরা ব্যবহারিক প্রয়োগের উপর বেশি জোর দেন, যা কোনো তাত্ত্বিক বা ঐতিহাসিক আগ্রহের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”

পোপ ফ্রান্সিসের সাদা পোশাকের একটা বিশেষ তাৎপর্য ছিল। সাদা এবং লাল—এই দুটি রং পোপের পোশাকের প্রধান রঙ।

সাদা পবিত্রতা ও পরোপকার এবং লাল ত্যাগ ও ভালোবাসার প্রতীক।

জুতার রঙের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে মোজা সাধারণত সাদা বা লাল রঙের হয়।

পোপ ফ্রান্সিস কালো জুতা পরতেন। রিচার্ডসন উল্লেখ করেন, ফ্রান্সিসকান সন্ন্যাসীরা দারিদ্র্য ও সেবার প্রতীক হিসেবে কালো জুতা ও স্যান্ডেল পরেন।

সম্ভবত তিনি একজন যাজক হিসেবে যে জুতা পরতেন, সেটাই সবসময় ব্যবহার করতেন।

সম্প্রতি, এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা একটি ছবিতে পোপ ফ্রান্সিসকে আধুনিক ফ্যাশনে দেখা যায়। বিষয়টি হাস্যকর হলেও, রিচার্ডসন এর মধ্যে অন্য একটি দিক খুঁজে পান।

তাঁর মতে, “যদিও ছবিটি ভুয়া ছিল, তবুও এটি এমন একজন পোপের প্রতি সম্মান, যিনি ঐতিহ্যকে অনুসরণ করেন, আবার বর্তমান বিশ্বের সঙ্গেও সংযোগ রাখেন।

অতীত এবং বর্তমানকে উপলব্ধি করে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়াই তাঁর লক্ষ্য।”

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *