পোপ ফ্রান্সিসের অসুস্থতা এবং দুর্বলতা: বৃদ্ধ বয়সে কিভাবে দুর্বলতাকে মেনে নেওয়ার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নিউমোনিয়ার সঙ্গে লড়ে অবশেষে হাসপাতাল থেকে ফিরে এসেছেন পোপ ফ্রান্সিস।
৮৮ বছর বয়সী এই ধর্মগুরুকে দুর্বল দেখাচ্ছিল, শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু এই অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি যেভাবে নিজেকে সকলের সামনে তুলে ধরেছেন, তা যেন বৃদ্ধ বয়সে শারীরিক দুর্বলতাকে মেনে নেওয়ার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ঐতিহ্যগতভাবে, ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা সবসময় নিজেদের দুর্বলতা গোপন রাখতে চেয়েছেন। জার্মানির কাইজারের কথা ধরুন, যিনি তাঁর একটি দুর্বল হাত সবসময় লুকিয়ে রাখতেন।
এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও তাঁর শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে ওঠা প্রশ্নগুলো এড়িয়ে গিয়েছেন।
কিন্তু পোপ ফ্রান্সিস এক্ষেত্রে ভিন্ন। তিনি তাঁর দুর্বলতাকে কখনো ঢাকেননি।
বরং, তিনি সবসময়ই তা দেখিয়েছেন। অনেক মানুষের মতে, দুর্বলতা যে জীবনের একটি অংশ, তা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন।
এই বিষয়ে শিকাগোর ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ের একজন গবেষক এস. জে. অলশ্যানস্কি বলেছেন, “কাউকে যদি ফোলা চোখে অথবা দুর্বল দেখা যায়, তবে তাতে কী আসে যায়?
এটা তো তাঁর জীবনেরই একটা অংশ। তিনি জানেন, জীবন একদিন শেষ হবে।
আমি তাঁকে দেখেছি, কিভাবে তিনি তাঁর জীবন যাপন করছেন। তিনি তাঁর কাজ চালিয়ে যেতে চান।”
পোপ ফ্রান্সিসের এই মনোভাব বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিশ্বে বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
তাঁর এই পদক্ষেপ যেন বুঝিয়ে দেয়, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকা সম্ভব।
পোপের এই বিষয়টি ক্যাথলিকদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাঁরা বিশ্বাস করেন দুর্বলতা এড়িয়ে যাওয়া বা গোপন করার মতো বিষয় নয়, বরং এটি একটি বড় শিক্ষা।
পোপ ফ্রান্সিস তাঁর অসুস্থতা থেকে সেরে ওঠার জন্য লেন্ট সময়কে ‘আরোগ্য লাভের সময়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, তিনি নিজেও এই সময়ে তাঁর আত্মা ও শরীরে আরোগ্য অনুভব করছেন।
সাধারণত, প্রতি রবিবার সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের বারান্দা থেকে তিনি ভাষণ দেন, কিন্তু অসুস্থতার কারণে গত সাত সপ্তাহ ধরে তিনি তা করতে পারেননি।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন, মধ্যপ্রাচ্য, কঙ্গো এবং ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারের মানুষের জন্য তিনি প্রার্থনা করেছেন।
তাঁর এই উদ্যোগ ১.৩ বিলিয়ন ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীর কাছে এক নতুন বার্তা পৌঁছে দিয়েছে।
ভ্যাটিকানের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “গির্জা কোনো রাষ্ট্র বা কোম্পানি নয়, এটি একদল মানুষের পরিবার।
পরিবারে যেমন দুর্বল হলেও কর্তৃত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দেওয়া যায়, তেমনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত একজন মানুষ তাঁর দায়িত্ব পালন করতে পারেন।”
তিনি আরও যোগ করেন, তরুণ প্রজন্মের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
তাঁদের বোঝা উচিত, তাঁরাও দুর্বল এবং তাঁদের দুর্বলতাকে স্বীকার করতে হবে।
শারীরিক দুর্বলতা সত্ত্বেও পোপ ফ্রান্সিসের এই কাজ প্রমাণ করে, দুর্বলতা সত্ত্বেও একজন মানুষ তাঁর কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।
দুর্বল, প্রতিবন্ধী বা বয়স্ক ব্যক্তিদের সমাজের প্রান্ত থেকে সরিয়ে দেওয়ার মানসিকতা ত্যাগ করে তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।
পোপ জন পল দ্বিতীয়ও তাঁর অসুস্থতার সময়ে অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন, কিন্তু ভ্যাটিকান সবসময় তাঁর দুর্বলতা গোপন রাখতে চেষ্টা করেছে।
তাঁকে হুইলচেয়ারে পর্যন্ত দেখা যায়নি। পোপ ফ্রান্সিসের এই পদক্ষেপ অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস