পোপের আগমন: ইরাকে ধ্বংসস্তূপের মাঝে আশা জাগিয়েছিলেন যিনি!

পোপ ফ্রান্সিসের ইরাক সফর: এক কঠিন সময়ে আশা জাগানো এক মুহূর্ত।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাকে একদা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস ছিল, যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সেখানে নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায়, বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিভিন্ন সংঘাত ও অস্থিরতার কারণে এই সম্প্রদায়ের মানুষগুলো চরম বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে।

আইএসআইএস-এর (ISIS) মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলা ও অত্যাচারের ফলে তাদের অনেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে, অনেকে হারিয়েছে তাদের আপনজন। এমন এক সংকটপূর্ণ সময়ে, ২০২০ সালে পোপ ফ্রান্সিসের ইরাক সফর যেন এক ঝলক আলো নিয়ে এসেছিল।

পোপ ফ্রান্সিসের এই সফর ছিল ইরাকের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের জন্য এক বিরল মুহূর্ত। যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরগুলোতে, বিশেষ করে মসুলের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে তিনি ভালোবাসার বার্তা শুনিয়েছিলেন। তাঁর উপস্থিতি যেন সেখানকার মানুষের কাছে নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।

এই সফরের মাধ্যমে পোপ শুধু খ্রিষ্টানদের প্রতি সহানুভূতি জানাননি, বরং মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। শিয়া মুসলিমদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ আলি আল-সিস্তানির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ছিল আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

ইরাকের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, ক্যালডীয়ান আর্চবিশপ নাজিব মুসা মিশায়েল, পোপের এই সফরকে “যেন মসুলের মানুষের জন্য একটি বিয়ের উৎসব”-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, পোপ ফ্রান্সিস ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে ভালোবাসার বার্তা দিয়ে বিভেদের দেয়াল ভেঙে দিয়েছিলেন।

পোপের এই সফরের ফলে শুধু খ্রিষ্টান সম্প্রদায় নয়, বরং পুরো ইরাকের মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের একটা ঢেউ লেগেছিল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তাঁর সফরের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর, শহরটির পুনর্গঠনেও অনেকে এগিয়ে আসে।

মসজিদ ও গির্জা—উভয় স্থানেই সংস্কার কাজ শুরু হয়।

পোপ ফ্রান্সিসের এই সফরকালে মুসলিম ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যেকার সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। ক্যালডীয়ান প্যাট্রিয়ার্ক কার্ডিনাল লুই রাফায়েল সাকো জানিয়েছেন, পোপ মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে বিশেষভাবে আগ্রহী ছিলেন।

তিনি বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশ—যেমন মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও জর্ডানেও সফর করেছেন।

পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর ইরাকের খ্রিষ্টান সম্প্রদায় আবারও তাঁর সেই ঐতিহাসিক সফরের কথা স্মরণ করছে। তাঁদের কাছে, পোপের এই সফর ছিল এক কঠিন সময়ে পাওয়া আশার আলো।

তাঁর এই সফর শুধু ইরাকের খ্রিষ্টানদের জন্যই নয়, বরং সারা বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের প্রতি সংহতি প্রদর্শনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *