পোপ ফ্রান্সিসের আমলে ক্যাথলিক চার্চে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য কিছুটা সহমর্মিতা দেখা গেলেও, চার্চের মূল নীতিমালায় বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। সম্প্রতি প্রয়াত হওয়া পোপ ফ্রান্সিস, তাঁর সময়ে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি ক্যাথলিক চার্চের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছিলেন।
তিনি তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখালেও, সমকামিতা এবং উভকামী সম্পর্ককে এখনো চার্চের নীতি অনুযায়ী ‘অস্বাভাবিক’ হিসেবেই গণ্য করা হয়।
পোপ ফ্রান্সিসের এই উদার মনোভাব বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার কর্মীরা, যারা চার্চের নীতিমালায় পরিবর্তন চান, তারা এই পরিবর্তনে খুশি হলেও, মূল নীতি অপরিবর্তিত থাকায় হতাশ হয়েছেন।
অন্যদিকে, রক্ষণশীল ক্যাথলিক নেতারা পোপের এই পদক্ষেপ ভালোভাবে নেননি। বিশেষ করে, তিনি যখন সমকামী যুগলদের আশীর্বাদ করার অনুমতি দেন, তখন অনেকে এর তীব্র বিরোধিতা করেন।
আফ্রিকার অনেক বিশপ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের অবস্থান জানান। তাঁদের মতে, সমকামিতা ঈশ্বরের ইচ্ছার পরিপন্থী।
তবে, পোপ ফ্রান্সিস বিভিন্ন সময়ে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের প্রতি তাঁর সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। তিনি তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন এবং চার্চকে আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক করার চেষ্টা করেছেন।
তাঁর এই উদার মানসিকতার কারণে অনেক ট্রান্সজেন্ডার নারী, বিশেষ করে যারা ইতালির রোমে এসে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করেন, তারা পোপের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, আগে চার্চ তাঁদের এড়িয়ে চলত, কিন্তু পোপ ফ্রান্সিসের সময়ে চার্চের দরজা তাঁদের জন্য খুলে গেছে।
২০২৩ সালে ভ্যাটিকানে অনুষ্ঠিত একটি সিনড-এর (Synod) ঘটনা পোপের এই মিশ্র উত্তরাধিকারের একটি উদাহরণ। এই সিনডে চার্চের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করার কথা ছিল, যেখানে এলজিবিটিকিউ+ বিষয়ক কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা ছিল।
এমনকি পোপের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে একজন জেসুইট যাজকও ছিলেন, যিনি এই সম্প্রদায়ের অধিকারের পক্ষে কথা বলেন। কিন্তু সিনডের চূড়ান্ত সারসংক্ষেপে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করা হয়নি, যা রক্ষণশীলদের প্রভাবের প্রমাণ।
পোপ ফ্রান্সিসের সময়ে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের প্রতি ক্যাথলিক চার্চের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হলেও, সেই পরিবর্তনের গতি ছিল খুবই ধীর। তিনি তাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখালেও, চার্চের মূল নীতিমালায় বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি।
তবে, তাঁর এই উদ্যোগ এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের কাছে কিছুটা হলেও আশার আলো জুগিয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।