ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর কেন ভেঙে ফেলা হবে পোপের আংটি?

পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর তার আংটি কেন ধ্বংস করা হবে?

ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের (Pope Francis) সম্প্রতি ৮৮ বছর বয়সে ইস্টার সানডে-তে (Easter Monday) মৃত্যু হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পরে, একটি বিশেষ রীতি পালন করা হবে – তাঁর ব্যবহৃত ‘ফিশারম্যান’স রিং’ (Fisherman’s Ring) বা মৎস্যজীবীর আংটিটি হয় ভেঙে ফেলা হবে, অথবা এর ওপর এমনভাবে খোদাই করা হবে যেন সেটি আর ব্যবহার করা না যায়। এই আংটিটি ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা পোপের ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

এই আংটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে শত শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য। সেন্ট পিটার, যিনি ছিলেন একজন মৎস্যজীবী এবং ক্যাথলিক ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রথম পোপ ছিলেন, তাঁর থেকেই এই আংটির নামকরণ করা হয়েছে। পোপ ফ্রান্সিস তাঁর ১২ বছরের শাসনামলে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে এই আংটিটি ব্যবহার করেছেন। অনেক ভক্ত এই আংটিটি চুম্বন করতেন, যা নিয়ে একবার স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছিল।

ঐতিহ্য অনুযায়ী, প্রয়াত পোপের মৃত্যুর পর তাঁর এই আংটি ধ্বংস করা হয়। এর মূল কারণ হলো, পোপের মৃত্যুর পরে তাঁর নামে কোনো জাল দলিল তৈরি করা রুখে দেওয়া। একসময় পোপের সরকারি চিঠিপত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রে এই আংটির ছাপ ব্যবহার করা হতো, অনেকটা বর্তমানের স্ট্যাম্পের মতো। জালিয়াতি বন্ধ করার জন্যই মৃত্যুর পর এই আংটি ভেঙে ফেলা হতো। সিএনএন-এর ভ্যাটিকান সংবাদদাতা ক্রিস্টোফার ল্যাম্ব (Christopher Lamb) এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “এটা অনেকটা সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট থেকে লগইন ডিটেইলস সরিয়ে নেওয়ার মতো। এর মাধ্যমে জাল দলিল তৈরি করা বন্ধ করা হতো।”

ঐতিহ্য অনুসারে, পবিত্র রোমান চার্চের ক্যামেরলেঙ্গো (Camerlengo) নামক একজন সিনিয়র কার্ডিনাল (Cardinal), যিনি এই পরিবর্তনের তত্ত্বাবধান করেন, পোপের মৃত্যুর খবর ঘোষণার পরে কার্ডিনালদের উপস্থিতিতে এই আংটি ও বুল্লা (Bulla) ধ্বংস করতেন।

তবে, পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট (Pope Benedict XVI) ২০১৬ সালে পদত্যাগ করার পর একটি নতুন রীতি চালু হয়। আংটিটি পুরোপুরি ধ্বংস করার পরিবর্তে, এর উপরিভাগে গভীর একটি ক্রস চিহ্ন খোদাই করা হয়। ক্রিস্টোফার ল্যাম্ব মনে করেন, সময়ের সাথে সাথে পোপের পরিচয় নকল করার সম্ভাবনা কমে যাওয়ায় আংটি ধ্বংস করার প্রয়োজনীয়তাও কমে গেছে।

বর্তমানে ক্যামেরলেঙ্গোর দায়িত্বে থাকা কার্ডিনাল কেভিন জোসেফ ফারেলও (Kevin Joseph Farrell) পোপ নির্বাচনের আগে এই আংটিতে অনুরূপভাবে খোদাই করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আংটি চুম্বন: বিতর্ক ও তাৎপর্য

পোপের ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে এই আংটির গুরুত্ব থাকলেও, বিভিন্ন পোপের আমলে এর ব্যবহারের ধরনে ভিন্নতা দেখা গেছে। পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট প্রতিদিন এই আংটি পরতেন, আবার পোপ দ্বিতীয় জন পল (Pope John Paul II) বিকল্প একটি আংটি বা ক্রুশ-আকৃতির একটি অলঙ্কার ব্যবহার করতেন। পোপ ফ্রান্সিস আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে ফিশারম্যান রিং ব্যবহার করতেন, তবে দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য তিনি সাধারণ একটি রুপোর আংটি পরতেন।

আংটি চুম্বন নিয়েও বিতর্ক ছিল। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে, ভক্তরা যখন আংটি চুম্বন করতে আসতেন, তখন পোপ ফ্রান্সিসকে বারবার হাত সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। পরে ভ্যাটিকান জানায়, এর কারণ ছিল জীবাণু সংক্রমণের বিস্তার রোধ করা। ক্রিস্টোফার ল্যাম্ব জানান, পোপ ফ্রান্সিস সবসময় সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পছন্দ করতেন। তিনি কারো কাছ থেকে আংটি চুম্বন বা তাঁর সামনে নত হওয়ার প্রত্যাশা করতেন না।

‘পুনর্ব্যবহৃত’ আংটি

ঐতিহ্যগতভাবে, ফিশারম্যান রিংগুলি নতুন পোপের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হতো। তবে পোপ ফ্রান্সিস এক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি নতুন আংটি তৈরি না করে, পোপ ষষ্ঠ পল (Pope Paul VI)-এর সেক্রেটারির একটি আংটি ব্যবহার করেছিলেন। এই আংটিটি ছিল সোনার প্রলেপযুক্ত রুপোর তৈরি।

পোপ নির্বাচনের পরে এই আংটির কী হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *