পোপ ও ট্রাম্প: দুই প্রভাবশালী নেতার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের মধ্যেকার সম্পর্ক সবসময়ই ছিল আলোচনার বিষয়। তাঁদের রাজনৈতিক এবং আদর্শগত ভিন্নতা সত্ত্বেও, তাঁদের মধ্যে কিছু মিলও খুঁজে পাওয়া যায়। দুজনেই নিজেদের আসনে এসেছিলেন বহিরাগত হিসেবে, এবং দুজনেই সমাজের প্রান্তিক মানুষের কথা বলতেন।

২০১৩ সালে পোপ ফ্রান্সিস নির্বাচিত হওয়ার পর, ইতালির একটি হোটেলে নিজের বিল পরিশোধ করতে গেলে, ট্রাম্প এর সমালোচনা করেন। তিনি টুইটারে লেখেন, “পোপকে হোটেলের বিল পরিশোধ করতে দেখাটা আমার ভালো লাগেনি। এটা পোপের মতো কাজ নয়!”

তবে, তাঁদের মধ্যেকার অমিলগুলো ছিল স্পষ্ট। অভিবাসন এবং পরিবেশ রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে তাঁদের ভিন্ন মত ছিল। ট্রাম্প যেখানে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তৈরি করতে চেয়েছিলেন, সেখানে পোপ ফ্রান্সিস অভিবাসীদের প্রতি সহানুভূতির কথা বলেছিলেন।

২০১৭ সালে, ট্রাম্প যখন ভ্যাটিকান সিটিতে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তখন তাঁদের মধ্যেকার এই বিভেদ কিছুটা হলেও কমে আসে। তাঁদের মধ্যেকার আলোচনার মূল বিষয়গুলো ছিল অভিবাসন এবং জলবায়ু পরিবর্তন। এই সাক্ষাতে ট্রাম্পকে বেশ মুগ্ধ দেখাচ্ছিল।

পোপ ফ্রান্সিস পরিবেশ রক্ষার ওপর তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল ট্রাম্পকে উপহার দেন, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আরও সক্রিয় হওয়ার জন্য একটি বার্তা ছিল। তবে, এর কয়েক সপ্তাহ পরেই ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন।

অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের মতো, পোপ ফ্রান্সিসও ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনাকে সহজ মনে করতেন। এই সাক্ষাতে পোপ মেলানিয়া ট্রাম্পকে ইতালীয় ভাষায় জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি কি তাঁকে পোটিকা খেতে দিয়েছেন?” (স্লভেনীয় একটি ডেজার্ট)।

পোপ ফ্রান্সিস ট্রাম্পকে একটি জলপাই গাছের ছবি খোদাই করা পদক উপহার দেন, যা শান্তির প্রতীক হিসেবে পরিচিত। ট্রাম্প এর জবাবে বলেছিলেন, “আমরা শান্তি ব্যবহার করতে পারি।” বিদায় নেওয়ার সময় ট্রাম্প পোপকে বলেছিলেন, “আমি আপনার কথা ভুলব না।”

বারাক ওবামা এবং জো বাইডেনের সঙ্গে পোপ ফ্রান্সিসের সাক্ষাৎও ছিল উল্লেখযোগ্য। ওবামা পোপকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। বাইডেনের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগতভাবে কথা হয়, যখন বাইডেনের ছেলে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

পরবর্তীতে, বাইডেন যখন রাষ্ট্রপতি হন, তখন তিনি বিতর্কিত একটি সিদ্ধান্তের কারণে সমালোচিত হয়েছিলেন। তিনি এবং অন্যান্য রাজনীতিবিদ যারা গর্ভপাতের অধিকার সমর্থন করেন, তাঁদের কমিউনিয়ন গ্রহণ করা উচিত কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক চলছিল। বাইডেন জানিয়েছিলেন, পোপ ফ্রান্সিস তাঁকে একজন “ভালো ক্যাথলিক” বলেছেন এবং এই অনুষ্ঠান চালিয়ে যেতে বলেছেন।

২০২৪ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর, বিদায় নেওয়ার আগে বাইডেন আবারও পোপের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলের কারণে সেই সফর বাতিল করা হয়। তবে, বিদায়ের প্রাক্কালে বাইডেন পোপ ফ্রান্সিসকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা, ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম’ প্রদান করেন।

ট্রাম্প এবং পোপ ফ্রান্সিসের মধ্যেকার সম্পর্ক পরবর্তীতে আরও তিক্ত হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের গণ-নির্যাতনের পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা করে পোপ ফ্রান্সিস একটি চিঠি লেখেন, যেখানে তিনি অভিবাসীদের অধিকারের কথা বলেন।

পোপ ফ্রান্সিসের এই পদক্ষেপ, রক্ষণশীল আমেরিকান ক্যাথলিক এবং ভ্যাটিকানের মধ্যে একটি বিভেদ তৈরি করে। সম্প্রতি, পোপের মৃত্যুর আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভেন্সহ তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেই সাক্ষাতে পোপ ভেন্সকে একটি টাই, কিছু রোজারি এবং তাঁর সন্তানদের জন্য তিনটি বড় চকলেট ইস্টার ডিম উপহার দেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *