গাজায় যুদ্ধ-বিধ্বস্ত খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতি পোপ ফ্রান্সিসের গভীর ভালোবাসার এক বিরল দৃষ্টান্ত সম্প্রতি বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় বসবাস করা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতি পোপ ফ্রান্সিসের গভীর ভালোবাসার এক বিরল দৃষ্টান্ত সম্প্রতি বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। সেখানকার পবিত্র পরিবার গির্জায় প্রতিদিন নিয়মিত ফোন করতেন পোপ।
তাঁর এই মানবিকতা যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে বাঁচতে চাওয়া গাজার অসহায় মানুষগুলোর জন্য এক গভীর সান্ত্বনা হয়ে এসেছিল। খবর অনুযায়ী, যুদ্ধের শুরু থেকে গত ১৮ মাস ধরে প্রতিদিন স্থানীয় সময় রাত আটটায় তিনি ফোন করতেন।
পোপের এই ফোনকলগুলো ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত—কখনও ৩০ সেকেন্ড, আবার কখনও ১৫ মিনিটের মতো। সাধারণত তিনি গির্জার নেতাদের সঙ্গে কথা বলতেন এবং সেখানে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিদের কুশল জিজ্ঞাসা করতেন।
ফাদার গ্যাব্রিয়েল রোমানেল্লি, যিনি গাজার একমাত্র ক্যাথলিক প্যারিশের পুরোহিত, তিনি জানিয়েছেন, পোপ প্রায় প্রতিদিনই ফোন করতেন এবং যুদ্ধের ভয়াবহতা সত্ত্বেও শান্তির বার্তা দিতেন।
গাজার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরা মনে করেন, পোপ তাঁদের ভোলেননি। তাঁদের প্রতি তাঁর এই আন্তরিকতা বুঝিয়ে দেয়, তিনি কতটা ভালোবাসেন।
মুসা আন্তোনে নামের একজন স্থানীয় খ্রিস্টান বাসিন্দা জানান, পোপ সবসময় তাঁদের সাহস জুগিয়েছেন এবং গাজা না ছাড়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন। আন্তোনে আরও বলেন, পোপ শুধু খ্রিস্টানদের প্রতিই নয়, সকল গাজাবাসীর প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন।
পোপ ফ্রান্সিস বরাবরই গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন এবং ইসরায়েলের অবরোধের সমালোচনা করেছেন। মৃত্যুর আগের দিন ইস্টার বার্তায় তিনি পবিত্র ভূমি এবং সারা বিশ্বে শান্তির আলো ছড়ানোর কথা বলেছিলেন।
তিনি গাজার মানুষের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, যেখানে যুদ্ধ ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাচ্ছে এবং মানবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিনি যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা, জিম্মিদের মুক্তি এবং ক্ষুধার্ত মানুষের সাহায্য করার আহ্বান জানান।
পবিত্র পরিবার গির্জাটি বর্তমানে গাজার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য একটি আশ্রয়স্থল। ইসরায়েলি হামলায় ঘরবাড়ি হারানো অনেক পরিবার এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
গির্জার প্রাঙ্গণে তাঁবু খাটিয়ে তাঁরা থাকছেন। গির্জা এবং গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় গাজার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রায় ২০ জন সদস্য নিহত হয়েছেন।
পোপ ফ্রান্সিসের মানবিক দিকটি বুঝিয়ে দেয়, তিনি কতটা সাধারণ মানুষের কাছাকাছি ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি একবার পশ্চিম তীরে গিয়েছিলেন, তবে গাজায় তাঁর যাওয়া হয়নি।
তারপরও তিনি গাজার মানুষের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গির্জার জরুরি কমিটির প্রধান ফাদার জর্জ আন্তোনে জানান, পোপ সবসময় তাঁদের ভয়ের বিরুদ্ধে সাহস জুগিয়েছেন এবং প্রার্থনা করার জন্য উৎসাহিত করেছেন।
বিশ্বে ক্যাথলিক জনসংখ্যা প্রায় ১.৪ বিলিয়ন। গাজায় খ্রিস্টানদের সংখ্যা ১,৪০০-এর কম। পোপ ফ্রান্সিসের এই ধারাবাহিক প্রচেষ্টা প্রমাণ করে, তিনি তাঁর অনুসারীদের কতটা ভালোবাসতেন।
গুরুতর অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি নিয়মিত ফোন করেছেন। মৃত্যুর আগের দিন, শনিবারও তিনি ফোন করেছিলেন, যা ছিল তাঁর সংক্ষিপ্ত কলগুলোর একটি। ফাদার রোমানেল্লি জানান, তিনি অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত ফোন করতে চেয়েছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন