মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া পোপ লিও ১৪-কে নিয়ে বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে। তিনি একইসাথে একজন মার্কিন নাগরিক এবং ভ্যাটিকান সিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এই পরিস্থিতিতে তার নাগরিকত্ব নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে। একজন বিদেশি রাষ্ট্রের প্রধান হয়েও তিনি কি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক থাকতে পারবেন? এমন প্রশ্ন এখন আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার বিষয়।
পোপ লিও, যিনি আগে রবার্ট প্রিভোস্ট নামে পরিচিত ছিলেন, ১৯৫৫ সালে শিকাগোতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পেরু—উভয় দেশেরই নাগরিক।
পেরুতে তিনি মিশনারি ও বিশপ হিসেবেও কাজ করেছেন। পোপ হিসেবে লিও ক্যাথলিক চার্চের প্রধান এবং ভ্যাটিকান সিটিরও প্রধান। ভ্যাটিকান সিটি বিশ্বের ক্ষুদ্রতম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত।
১৯২৯ সালে ইতালি ও পবিত্র আসনের মধ্যে হওয়া একটি চুক্তির মাধ্যমে এর স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানাচ্ছে, যারা বিদেশি সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি তারা বিশেষভাবে পর্যালোচনা করতে পারে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় নিজের নাগরিকত্ব ত্যাগ না করেন, তাহলে তাকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা যায় না।
এক্ষেত্রে পোপ লিও’র নিজের ইচ্ছায় নাগরিকত্ব ত্যাগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পোপ লিও’র পেরুর নাগরিকত্ব বহাল রাখতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, পেরুর আইনে এমন কোনো নিয়ম নেই যা তাকে নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে বাধ্য করবে। ২০১৫ সালে তিনি পেরুর নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।
পেরুর আইন অনুযায়ী, সে দেশের নাগরিকদের নির্বাচনে ভোট দিতে হয়। তবে, পোপের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না, কারণ তিনি ৭০ বছর বয়সের বেশি।
আগের পোপদের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। ভ্যাটিকান সাধারণত এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করে না।
তবে, পোপ ফ্রান্সিস আর্জেন্টিনার পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন এবং পোপ দ্বিতীয় জন পল, যিনি পোল্যান্ডের নাগরিক ছিলেন, তিনি তার দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে অন্য কোনো দেশের সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালনের উদাহরণও রয়েছে। বরিস জনসন, যিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি একসময় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন।
পরে তিনি ব্রিটিশ সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন। একইভাবে, সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবদুল্লাহি মোহামেদও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়ে নিজ দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
পোপ লিও’র এই দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনের একটি জটিল বিষয়। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, কোনো বিদেশি সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় একজন মার্কিন নাগরিকের যুক্তরাষ্ট্রের আইনের অধীনে থাকা না থাকার বিষয়টি এখানে জড়িত।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস